এ দেশ রক্ষার দায়িত্ব সবার।
--সেখ নাসিম আহাম্মাদ ।
যে সভ্যতায় মৃত দেহ নিয়ে ব্যবসা হয়
অধিস্পৃহা যশ প্রতিপত্তি, বিচারাচারের সংজ্ঞা বদলে দেয়
যে সভ্যতা ধর্ষকের সমর্থনে পথে নামে
যে প্রশাসন প্রমাণ লোপাটের জন্য
ধর্ষিতার দেহ জ্বালিয়ে দেয়
আমি তাকে ঘৃণা করি।
যে আপ্তগরজি সাংবাদিক সত্য গোপন করে রাজস্তুতি করে
যে সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী সমাজসেবী সব দেখেও
প্রতিবাদ করেনা বিবেকহীন নির্লজ্জ উদাসীন থাকে,
আমি তাকে ঘৃণা করি।
কায়েমিস্বার্থে যে ডাক্তার রোগীদের খদ্দের ভেবে
নিরীহ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে ব্যবসা খোঁজেন
আর তা দেখে ক্ষমতার অলিন্দে বসে থাকা
শিক্ষিত মানুষ গুলি যখন নিস্পৃহ বসে থাকেন
তখন আমি তাদের ঘৃণা করি।
সভ্যতার কাণ্ডারি সেজে মহান হবার লক্ষে মঞ্চে মঞ্চে
যারা মানুষের জন্য মায়া কান্না কেঁদে বেড়ান আর
গঙ্গাবক্ষে হাজার হাজার বেওয়ারিশ লাশ দেখেও
নির্লিপ্ত অশ্রুহীন চোখে বসে থাকেন
আমি তাদের ঘৃণা করি।
উৎপীড়িতের ক্রন্দনে বাতাস ভারি
বেকারের হাহাকার ক্ষুধার্তের চিৎকার
ধর্ষিতার রক্তমাখা ক্ষতবিক্ষত বিবস্ত্র দেহ নিয়ে
কুকুরের টানাটানি বুনো শুয়োরের উল্লাস
পিতা মাতার ন্যায় বিচারের করুণ আর্জি
ক্ষমতার ফিতায় আটকে বাকরোধ হয়ে নিষ্প্রাণ ফিরে আসা
আমি মানতে পারিনা।
ক্ষমতায় টিকে থাকার নেশায় ধর্মান্ধের
পৈশাচিক উন্মাদনাকে উপেক্ষা করে
রাষ্ট্রনায়কদের ধূর্ত শৃগালের মত ছল চাতুরী ও
শকুনের দৃষ্টি নিয়ে মসনদ চমকানোর নির্লিপ্ত খেলা
আমি মানতে পারিনা।
শবদেহের উপর নির্মিত প্রাসাদোপম অট্টালিকায়
মায়াবী আলোয় মদিরার মাদকতায় ওয়েস্টান মিউজিকে
সল্পবসনা সুন্দরী নর্তকিদের সাথে তাদের নগ্ননাঁচ ও
ক্যামেরার চোখ ঝলসানো আলো
আমাকে পাগল করে তোলে
আমি মানতে পারিনা।
শরীরের প্রতিটি কোষ স্নায়ু শিরা উপশিরা
এক সাথে বিদ্রোহ করতে চায়,
আমি উন্মাদ হয়ে যাই।
মনে হয় ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলি
সভ্যতার এইসব বস্তাপচা নিয়মাবলী
সূর্যের দহনে দাহন করে দেই সেই সব নরপিশাচদের
উন্মোচন করে দেই সেই সব রক্তচোষা জানোয়ার দের মুখোশ
লক্ষ শহিদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতার অবৈধ সুযোগ নিয়ে
আলেয়ার গল্পগাথায় যারা ফিরিঙ্গীদের মত
ভূমি জাত দের শোষণ করতে চায়
কোটি কোটি ক্ষুধার্তের মুখের গ্রাস কেড়ে
আখের গোছাতে চৌর্যবৃত্তিকে আম করে ভিক্ষাবৃত্তির
দিকে ঠেলে দেওয়া-- আমি মানতে পারিনা।
আমি মানতে পারিনা আমার দেশের শিক্ষা পণ্য হোক
আমি মানতে পারিনা আবর্জনার স্তূপ থেকে পথশিশুরা
উচ্ছিষ্ট খাবার কুড়তে কুড়তে কুকুরের সাথে কাড়াকাড়ি করুক
আমি মানতে পারিনা সন্ধ্যা হলে কোন বোন
প্রসাধনী মেখে শহরের রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের নিচে
পেটের দায়ে সভ্য সমাজের যৌন চাহিদা মেটাতে
শরীর বিক্রি করুক
আমি মানতে পারিনা এখনও কেন
আমার মাতৃভূমিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটবে
অষ্ট প্রহর আমার কানে দামামার মত বাজে
হামলায় নিহত এক সেনা জননীর মর্মস্পর্শী উক্তি
ছাতি বা দৈর্ঘ্যে সামান্য কম হলে
তোমরা তো নাওনা তোমাদের দলে
তাহলে আমি কেন আমার সন্তানের খণ্ডবিখণ্ড দেহ ফেরৎ নেবো?
জননীর সেই আকুতি আমাকে ঘুমোতে দেয়না
দুঃস্বপ্নে ফলার মত বুকে বেঁধে তাঁর প্রতিটি শব্দ
রক্তে সিক্ত হয়ে ওঠে হৃদয়
হাপরের মত ওঠানামা করে আমার বুক
আমি মানতে পারিনা
নিখোঁজ ছাত্রের অনুসন্ধানের আর্জি নিয়ে গর্ভধারিণী মায়ের
ক্যাম্পাস থেকে রাজপথ বক্ষবিদারিত
অশ্রু প্লাবিত কণ্ঠে অনুরণিত ইনসাফের আওয়াজ
ফালাফালা করে দেয় আমার হৃৎপিণ্ড
প্রখ্যাত লেখক সত্যান্বেশি সাংবাদিক
ইনসাফ কারি বিচারপতির প্রকাশ্য খুন
আমি মানতে পারিনা
মবলিঞ্চিং জাতিদাঙ্গা ভুয়ো এনকাউন্টারে
নিহত মানুষের ক্ষতবিক্ষত দগ্ধ ঝলসানো মৃতদেহ গুলি
সর্বদা আমার কানের কাছে চিৎকার করে বলে
আমি না তোমার ভাই
আমি না তোমার বোন
আমি না তোমার মা
তাদের আর্ত চিৎকার আমার চিত্তকে অস্থির করে তোলে
করুণার দৃষ্টিতে তারা যেন হেসে হেসে বলে
আমরা তো মরেই গেছি
তোমরা কি বেঁচে আছো?
ভালো করে তাকিয়ে দেখো
তোমাদের মনের কঙ্কাল সরু সরু হাত পা নিয়ে
কবরের অন্ধকারে মৃত বিবেককে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে
তোমাদের বিবেকও মরে গেছে
আর অকারণ দেহের ভার না বয়ে
কিছু ভার কমিয়ে দাও এই পৃথিবীর
আর ঠিক তখনই বেরিয়ে আসে এই কবিতা
আমি তো কোন কবি নই
বন্ধুর আড্ডার চায়ের পেয়ালায়
উঠে আসা কথাগুলি যদি কবিতা হয়
তাহলে এই কবিতার প্রতিটি শব্দ প্রতিটি পঙক্তি
প্রতিটি চারণ প্রতিটি লাইন তাল লয় মাত্রা
গ্রেনেড রকেট লাঞ্চার বোমার মত
ছুড়ে মারতে চাই সেইসব নরাধমদের
যাদের কারণে শূন্য হয় মায়ের কোল
রমণীর অঙ্গে ঢাকে সাদা আঁচল
সন্তান হয় এতিম নিরিহের রক্তে লাল হয় মাটি
বাতাসে ভাসে লাশের গন্ধ
পাখিরা গান ভুলে যায় পাড়ি দেয় কোন অচিন দেশে
সবুজ পরিণত হয় শ্মশানে
আমি ফিরিঙ্গি শাসন দেখিনি
দেখিনি পরাধীনতার শৃঙ্খল
বুঝেছিলাম এই কবিতার মত কালো কালো কিছু অক্ষর পড়ে
সেই বেরঙ নিরস অক্ষরগুলি হৃদয়পটে ছবি একে দিয়েছিল
শোষণের বিরুদ্ধে শোষিতের লড়াই ও
স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্ম বলিদানের অমর অক্ষয় চিত্রপট
আজ হাজার রঙের পেনসিল
মোলায়েম মশৃন সুদৃশ্য কাগজ
নামি দামি চিত্র শিল্পী অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতেও আমি
বুঝতে পারিনা স্বাধীনতার মানে
খাবারে প্রতিবন্ধকতা পরিধানে প্রতিবন্ধকতা
বলা চলায় প্রতিবন্ধকতা ধর্মাচারণে প্রতিবন্ধকতা
এমনকি প্রেমেও প্রতিবন্ধকতা
তাহলে কোথায় স্বাধীনতা
সর্ববৃহৎ গনতন্ত্রে আজ বিচার বিক্রি হয়
আস্থার ভিত্তিতে ফয়সালা হয় সর্বোচ্চ আদালতে
প্রতিবাদী কলমচিদের স্থান হয় সেলুলয়েডের মত চার দেওয়ালে
প্রশ্ন উঠলেই মাওবাদী সন্ত্রাসবাদী দেশদ্রোহীর তকমা সাটিয়ে
কালাকানুনের বলে ঠিকানা হয় অন্ধকার কুঠুরি
কৃষক শ্রমিক ছাত্র শিক্ষক সবাই রাজপথে
এ কেমন স্বাধীনতা
ন্যায্য দাবী আদায়ে মাসের পর মাস
এমনকি বছর অতিক্রান্ত হয়ে যায় রাজপথে বসে
এই স্বাধীনতার জন্যই কি আমাদের পূর্বপুরুষরা
আত্মবলিদান দিয়েছিলেন
তার কি ভেবেছিলেন স্বাধীন দেশে কখনও
ক্ষমতালিপ্সুরা ক্ষমতার বিশ্বায়নে নিউক্লিয়ার উৎসবে মেতে উঠবে
রোগ দমনে মানুষ ব্যবহৃত হবে গিনিপিগের মত
বোকা বাক্সের ভিতরে মানবতা বন্দি হয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদবে
কাঁটা তারের বেড়ার আটকে যাবে সৌজন্যতা
বক ধার্মিকের ইশারায় নাচবে রাজচক্র
দেশের সম্পদ নিলাম হবে
বিভাজনের গভীর সর্বনাশা চক্রান্তে
বহুকথিত সোনে কি চিড়িয়া বন্দি হবে খাঁচায়
মহাবলয়ের এই গোলোক গভীর জ্বরে আক্রান্ত
কাঞ্চন জঙ্ঘার কঠিন বরফ ফুঁড়ে বেরতে চায় গলিত লাভা
আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত ধোঁয়া ঢেকে দিতে চায় নভোমণ্ডল
আপনারা প্রতিষ্ঠিত কবি সাহিত্যিক যারা
বড় বড় আসনের শোভাবর্ধন করছেন
আপনাদের কলমে উঠে আসে আসুক প্রেম বিরহের অমর গাথা
আমি লিখে যাব আমার হৃদয় লহুতে আমার দেশের কথা
উলঙ্গ হাতকে বানাব হাতিয়ার
মসি হয়ে যাবে শাণিত তলোয়ার
বজ্রমুষ্ঠি তুলবে আওয়াজ
এসো হে দেশের নওজোয়ান
আপনার স্বার্থে হও আগুয়ান
জ্বলছে আগুন ঝরছে খুন
তোমার হাতেই উদিত হবে আবার নবারুণ
এ দেশ তোমার এ দেশ আমার
এ দেশ রক্ষার দায়িত্ব সবার।