বিবেক
সেখ নাসিম আহাম্মাদ

বিবেক বন্ধক অন্ধ স্বার্থের কাছে
কলম নতমস্তক ক্ষমতাশীন রক্ত চক্ষুর কাছে।
প্রতিবাদী ভাষা মিডিয়ার তৈরি অপশব্দের চক্রব্যূহে আটক।
সুশীল সমাজ আজ প্রতিবাদ বিমুখ; গা বাঁচান বাছাই করা অন্যায়ের প্রতিবাদে অভ্যস্ত।
চেতনা গুলি ও যেন সময়ের সাথে হয়ে গেছে চেতনা শূন্য।
স্বাধীন দেশে ওঠা দ্বিতীয় স্বাধীনতার দাবী শুনে মধ্যযুগের ইতিহাস ও বুঝি লজ্জায় মুখ লুকাতে চায়।
আত্মকেন্দ্রিকতার প্রাধান্যে বোধ লুপ্ত হয়ে স্বার্থপরতা মানবতাকে বিভীষণ দেখছে।  
নামচিন কলমচি দের কলম প্রভু বন্দনায় যতটা সড়গড়
সত্য প্রকাশ বা সন্ধানে তাঁরা ঠিক ততটাই জড়সড়।
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে মাজরা লেগেছে অনেক আগেই।
ঘুণধরা গণতন্ত্রের কটকট আওয়াজে বিভ্রান্ত অধুনা যুবসমাজ।
অতিমারিতে সভা সমাবেশে সংক্রমণের আশঙ্কা নাই;
কিন্তু ব্যক্তি প্রয়োজনে শারীরিক দূরত্বের সরকারি নির্দেশিকায়
পুলিশ অতি সক্রিয় হয়ে জনগণের পিঠ ও পশ্চাদে
জেব্রাক্রসিং অঙ্কন করলেই যেন আইনের সঠিক প্রয়োগ হয়।
কত অসহায় মানুষ চিকিৎসাভাবে ছটফট করে ঝরে যায়।
অসুস্থ রুগী নিয়ে তাঁর পরিজন শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত
নিষ্ফলা দৌড়ে অবশেষে বলে “ হায় ভগবান তুমি নাকি সব দেখো”।  
একদিকে আনন্দ কোলাহল, জীবনের নান ভোগ উৎসব।
অন্যদিকে তিলে তিলে মৃত্যুর কাছে সঁপে দেওয়া মানুষের
নিথর দেহ।
নিজেকে নিয়েই আমরা ব্যস্ত, যেন ছুটে চলায় আমাদের কাজ;
তাই আমরা কেবল ছুটেই চলেছি।
কত আশা কত স্বপ্ন কত ভবিষ্যত ভেঙ্গে চুরে মাড়িয়ে
আমরা চলার পথ করে এগিয়ে চলেছি।
থামতে আমরা ভয় পাই, পাছে সত্যের মুখোমুখি হয়ে পড়ি;
সাহস নাই আমাদের সত্যের সম্মুখীন হবার।
জীবনের শত কোলাহল ও আনন্দের মাঝে মুহূর্ত কালের জন্য
যদি সময় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ায়!
যদি আমাদের আনন্দ উৎসবের আলো গুলি হঠাৎ করে ম্লান
হয়ে আসে!
তখন সেই ক্ষণিকের ম্লান আলোয় আমরা দেখতে পাবো
আমাদের মুখোশের ভিতরের আসল চেহারা গুলি।
কত নিষ্ঠুর, কত কুৎসিত, কত ভয়ঙ্কর দেখে হয়ত আমরা
নিজেরাই শিউরে উঠব।
চোখের সামনে আর্তের চিৎকার পথ দুর্ঘটনা চিত্র দেখে
আফশোষ সূচক কিছু শব্দ বড় জোর ফেসবুকে একটা
পোস্ট করে নিজেদের তৈরি গণ্ডিতে ফিরে যাই;
প্রত্যহ কাজ কর্মের পর কোনকিছুই ভাবার অবকাশ থাকেনা।
দিন শেষের পরিশ্রান্ত শরীরটা এলিয়ে দেই আরাম শয্যায়;
আর অন্ধকারের মধ্যে ঘড়ির কাঁটাটি তার আপন নিয়মে
টিক টিক করে চলতে থাকে।  
পরদিন প্রকৃতির নিয়মে আবার জ্বলে উঠে সব আলো;
আবার আমরা ফিরে যাই আমাদের আপন নিরাপদ সামাজিক সত্তায়।
আমরা ভুলে যাই মাঝে মধ্যেই মনের মাঝে জেগে ওঠা সেই
সাবধান বাণী;
আমাদের এই উন্মাদ হয়ে ছুটে চলার মাঝখানে।
যে হঠাৎ করেই মগজ সহ গোটা সত্তাটিকে নাড়িয়ে দিয়ে
মনুষ্যত্বের সাবধান বাণী টুকু হৃদয়ের কানে জানিয়ে দিয়ে যায়!
সে আমাদেরই অন্তরের শত্রু “বিবেক”।