কবিতার আসরে সিরিজ আকারে (প্রায় ১০০/১২০টি হবে) তাও তে চিং এর কাব্য দর্শন (৮১টি কাব্য দর্শন) নিয়ে আলোচনা লিখতে চাই। এই আসরের কবিদের কবিতা ছাড়া অন্য কোন কবিতা/কাব্য দর্শন আলোচনা করা যাবে কি না আমি নিশ্চিত না। এডমিন মহোদয়, মন্তব্য করলে আমার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধে হবে।
আমি দীর্ঘদিন থেকে তাও দর্শন পড়ছি, আয়ত্ত করার চেষ্টা করছি। মুলত নিজের আত্মোপলোব্ধি বাড়ানো এবং জীবন দর্শন মূলক লেখা আমাকে আকর্ষন করে বেশী, সেই থেকেই তাওবাদ পড়াশুনা। তাছাড়া, তাও বাদ, ডিপ্রেশনকে অনেকটা নিয়ন্ত্রন রাখতে সয়াহতা করে। আমি নিজে অনেক বেশী ডিপ্রেশনে থাকার কারনে, তাওবাদ চর্চা করি, সেইসাথে ধর্ম চর্চাও করে থাকি। মনে হলো, আসরের পাঠকদের জন্য লিখতে পারি।
তাও তে চিং কাব্যদর্শন নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাঃ
তাও তে চিং (মহান পথ..), চীনের প্রসিদ্ধ ধর্ম তাওবাদ-ধর্ম কিংবা তাওবাদ দর্শনের সূচনা এখান থেকেই। বইয়ের মূল লেখক হিসেবে ধারণা করা হয় লাওজি/লাও ৎসু (Laozi (Lao Tsu, Lao-Tze)) নামের কোন এক জ্ঞানী মহাপুরুষকে। চৈনিক ভাষায় লাওজি শব্দের অর্থ 'জ্ঞানী বৃদ্ধ' (Old Master), তার জন্ম, নাম, আসলেই তিনি ছিলেন নাকি পুরোটাই কল্পনা, এগুলো নিয়ে আজো গবেষনা হচ্ছে। কোন কোন ইতিহাসবিদের মতে তিনি খ্রিস্ট্রপূর্ব ৬০০ শতকের আবার কারো কারো মতে খ্রিষ্ট্রপূর্ব ২০০ শতকের; আবার কারো কারো মতে লাওজি শুধু একক ব্যক্তির নাম নয়, অসংখ্য জ্ঞানী মহাপুরুষদের সম্মিলিত নাম। যাহোক, এসব আসলে ইতিহাসের ব্যাপার, যখন বইগুলো পড়ি তখন অবাক হয়ে যাই, এত সুন্দর, এত মাধুর্যতাময় বিষয় অথচ বাংলা ভাষায় সহজলভ্য তো নয় ই, তারপরেও যে তিনটি অনুবাদ রয়েছে, সেগুলো পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার এবং সংগ্রহেও আছে-
১। হেলাল উদ্দিন আহম্মেদ এর তাওবাদ অনুবাদ “ প্রানীন চীনা দর্শন-লাওসি ও কনফুসিয়াস
২। সরকার আমিন এর তাও তে চিন-“সহজিয়া পথ”
৩। এস. এ. মুক্তাদীর সম্রাট এর তাও তে চিং মহান পথ...
৪। তাও তে চিংএর ইংরেজী ভার্সনও আছে।
অনুবাদ বইগুলো পরে অনুপ্রানিত হয়েছি, পরে ইংরেজী ভার্সনও পড়েছি। অনুবাদ গুলো পড়ার পর মনে হলো প্রতিটি অনুবাদের মূল সুর প্রায় এক থাকলেও একেক বইয়ে পটভূমি একেক রকমের, ভাষাগত ছন্দও আলাদা। এমন বই অবশ্যই জীবনে অন্তত একবার হলেও পড়া প্রয়োজন, তাওবাদের প্রতিটি কথাতে যেন জীবনের অভ্যন্তরের বাস্তবতা ফুটে উঠেছে, প্রতিবাদ হয়েছে সমগ্র কতৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার, বলা হয়েছে ভালবাসার কথা, জীবনের পথের কথা, সেই মহান পথ, যে পথ জীবনকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়, যেখানে থাকে না কোন ঘৃণা, থাকে না লোভ। সমগ্র মানবজাতির জন্য যেন উপহার স্বরূপ একটি বই। এটিতে মোট ৮১ টি দর্শনকাব্য রয়েছে। সমগ্র বই জুড়েই এক অদ্ভুত দ্বৈত অস্তিত্বের দেখা পাওয়া যায়, যেমন, আলো-আঁধার, পূর্ণ-অপূর্ণ, শূন্য-অশূন্য, মন্দ-ভাল, ন্যায়-অন্যায়, আসলে প্রত্যেকেই যেন একে অপরেরপরিপূরক। একটি না থাকলে যেন অপরটির অস্তিত্ব থাকে না।
আলোচনা শুরু করলে, আমি নিজে কিভাবে তাওবাদ কে অনুভব করেছি, সেগুলো শেয়ার করা যাবে।