আলোচনা ১১৪
যখন শব্দ ফুরিয়ে যায়- আসলেই কি শব্দ ফুরিয়ে যায়? নাকি শব্দ উচ্চারনে বাধাপ্রাপ্ত হয়? কবি দীপক কুমার বেরা তার কাব্য “যখন শব্দ ফুরিয়ে যায়’ কাব্যে আক্ষরিক অর্থেই ‘ফুরিয়ে যাওয়া’ বুঝাননি বরং একটি প্রেক্ষিতকে বিবেচনায় নিয়ে শব্দের খেলায় কখনো কখনো মানুষ পরাজিত হয়, সে পরাজয়ের মুহূর্তগুলো হয় আনন্দিত, রোমাঞ্চকর এবং উপভোগ্য। শব্দ ফুরিয়ে গেলেও মানুষ রোমাঞ্চিত এক অনুভবে নিজেকে ভাসিয়ে রাখে।
প্রেমিক-প্রমিকার দেখা হওয়ার মুহূর্তগুলো আসলেই এক অদ্ভুত রকমের রোমাঞ্চকর মুহূর্ত যা শব্দ দ্বারা ব্যাখা করা যায় না, আমরা কিছু কিছু শব্দ ব্যবহার করি সেই সময়ের অনুভূতিকে ব্যাখা করার জন্য যেমন বুক ধড়ফড় করে, কথা গুলিয়ে যায়, সঠিক শব্দ খুঁজে পাই না ইত্যাদি। যদিও এই জাতীয় শব্দ দ্বারা সঠিক অনুভূতি ব্যখা করা যায় না । কিন্তু সেই দেখা সাক্ষাৎ যদি প্রথমবার হয়, অনেকদিন পর হয়, দীর্ঘ অপেক্ষার পর হয় তাহলে তার মাত্রা আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। পরস্পরা অনুভুতির মধ্যেই সময় অতিবাহিত হয় কিছুই বলা হয় না, সেই ক্ষণকেই কবি বলেছেন ‘শব্দ ফুরিয়ে যায়’। কবির ভাষায়-
“অনেক বছর পরে...যখন বুকের ঝড় থামে, না-পাওয়া প্রেমের প্রথম প্রহর, আমার মনে পড়ে! না-বলা কথার শব্দেরা ভীড় জমায় ভীষণ ব্যথায়, নিস্তব্ধ গভীর নীরবতায়, লজ্জা ভাঙ্গার গোপন কথায়, কাঁপছিলো মন ভীষণ রকম, তুমি-আমি পরস্পরে, আজ অনেক বছর পরে!”
সেই সময়, একজন অন্যজনের সাথে অনেক কথা বলে, অনেক অভিমান করে, অনেক ভালবাসা বিনিময় করে কিন্তু শব্দ প্রয়োগ ছাড়াই। শব্দের প্রয়োজন হয় না, অনুভবের অনুভূতিগুলো নিজেই এক ধরণের ভাষা হয় যায়, তাই শব্দরা হারিয়ে যায়। কবি খুব চমৎকার করে বলেছেন এবং বেশ কিছু রূপক ব্যবহার করেছেন- “যতো অভিমানের মেঘ এসে, যদি কান্না হয়ে ভিজিয়ে দিতো... ঠোঁটের চুমু খোঁপার কাঁটায়, শরীর বেয়ে পায়ের পাতায় অঝোর ধারায় ভিজিয়ে দিতো... যদি আদ্যোপান্ত ভিজিয়ে দিতো!!”
কবিতাটি আমার খুব ভাল লাগেছে। কবির জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা।