আলোচনা ১৪২
ইহজগত এবং পরজগত (পরকাল), দুটোকে আমরা প্রায়ই আলাদা করে ফেলি। যিনি নাস্তিকতা চর্চা করেন তার জন্য আলাদা করা বেশ সুবিধে কেননা তিনি পরকালেই বিশাসী নন, তার সকল চিন্তা, ভাবনা, চেতনা, চাওয়া-পাওয়া সবই ইহজগতকে কেন্দ্র করে। কিন্তু যিনি ধার্মিক, তিনি পরকালে বিশ্বাসী বলেই তার জন্য দুটো জগতকে আলাদা করে ভাবে একটু কঠিন। কেনন ধর্ম চর্চা কেবলমাত্র উপাসনা করা নয় বরং ধর্মীয় রীতিনীতি, আচার আচরন সব জীবনের সাথেই সম্পর্কিত। পরকালকে ভাবনায় রেখে যে ধর্ম চর্চা সেটা মূলত একটা জীবন ব্যবস্থা, ফলে দৈনন্দিন জীবনের সব জায়গতেই তার প্রতিফলন থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।
এতো কথা বলার মূল কারন হলো, কবিতাটি খুব অল্পকথায় ইহজগত এবং পরজগত (পরকাল) দুটো ভাবনার এক সেতুবন্ধন মনে হয়েছে আমার কাছে। যেমন-নেয়ামত, আমানত দটো শব্দই মূলত ধর্মীয় ভাবধারা থেকেই মনের ভেতর গেথে থাকে। ইহজগতে যা কিছুই উপভোগ করি, যা কিছুই দেখি, শুনি কিংবা করি, করতে পারি সবই প্রকৃতি (আল্লাহ/খোদা/ ঈশ্বর/গড) প্রদত্ত এক নেয়ামত। প্রতি দিনের কিংবা ঘন্টার আমাদের যে জীবন সেটাই একটা নেয়ামত, প্রতি সেকেন্ড এমনকি এক ন্যানো সেকেন্ডও লক্ষ কোটি নেয়ামতের যোগফল।
আবার অন্যদিকে, আমানত, যা কিছুই আমাদের দেয়া হয়েছে সবই “আমানত” হিসেবে, কিছু বছর, দিন বা সময়ের জন্য আমাদের কাছে এই সম্পদ আমানত রাখা হয়েছে। কোন একদিন তা হিসেব করে ফেরত দিতে হবে। সে অর্থে “সময়” এক বিশাল সম্পদ আমাদের কাছে আমানত রাখা হয়েছে, তার সঠিক ব্যবহার হয়েছে কি না, তার যথোপযূক্ত মর্যাদা রাখা হয়েছে কি না, সবই একদিন হিসেব দিতে হবে। এই শব্দটিও পরজগত (ধর্মীয়) ভাবধারা থেকেই মনে উদ্ভুত।
কবিতার শুরুটা হয়েছে ইহজগতের সকল মুগ্ধতা, সকল সম্ভাবনা, সকল উপকারীতাকে মাথায় রেখে। আমরা সবাই জানি এবং বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমানিত, ভোরের শুদ্ধ বাতাস স্বাস্থ্যের জন্য ভীষন উপকারী, ভোরে শব্দ দূষন থেকে মুক্ত থেকে স্নিগ্ধ বাতাসে মন ভরে ওঠে। ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, ইহজাগতিক সমস্ত উপকারীতা নিহিত আছে।
এবার কবি, সংযোগ স্থাপন করলেন, ইহজগতের সাথে পরজগতের (পরকালের ভাবনা)। যদি ভোর উঠে ফজরের নামাজ পড়া যেতো, কেন আলসেমিতে ঘুমিয়ে থেকে আমাদের কাছে রাখা আমানতের (সময়) খেয়ানত করছি, অন্যদিকে ইহজগতের অপকারীতা থেকেও মুক্ত থাকতে পারছি না।
মাত্র ৮ লাইনের কবিতায়, কবি দারুন এক দার্শনিক ভাবনায় পাঠককে ভাবতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বেশ মুন্সিয়ানার সাথে।
কবির জন্য রইলো অফুরন্ত শুভেচ্ছা।