-আলোচনা ২৩১
কবিতাটি খুব সহজ সরল ভাষায়, দৈনন্দিন কথায় যেমনটা আমরা বলে থাকি, কবি ঠিক সেই ধরনটাই বেছে নিয়েছেন, নিজের মনের আকুতি কবিতার ফ্রেমে রাখতে চেয়েছেন।কবিতায় সব সময় জটিল সব শব্দ আর রূপকের ঝংকার থাকতেই হবে, আমি এমনটা মনে করি না তবে রূপক কবিতা পড়তে অনেকেরই বেশি ভালো লাগে, পাঠককে ভাবনার জায়গায় নাড়া দেয়। এমন অনেক কবিতাও পড়ি, পড়তে ভালো লাগে কিন্তু কোন অর্থ খুঁজে পাই না, কোন ম্যাসেজ পাই না কিংবা হয়তো আমিই বুঝতে পারি না, অথচ কবিতাটি বার বার পড়তে ইচ্ছে করে, মন ছুঁয়ে যায়। কবি বাবুল হাওলাদার এর কবিতা “ভালোবাসি এবং ঘৃণা করি”, আমার মনোযোগ আকর্যন করার অন্যতম একটি কারন “এবং” শব্দটি।
যদি কবিতার টাইটেল হতো, “ভালোবাসি ও ঘৃণা করি”, তাহলে কেমন হতো? আমি বাংলা ব্যাকরণ খুব ভালো জানি না (ভুল হলে মন্তব্যকারির কাছে সংশোধনের জন্য বিনীত অনুরোধ রইলো)
কিন্তু এখন আছে “ভালোবাসি এবং ঘৃণা করি”
“ভালোবাসা” এবং “ঘৃণা” করা দুটো আলাদা আলাদা অনুভূতি। ‘ও’ এর মাধ্যমে দুটো আলাদা অনুভূতিকে স্বাধীন সত্ত্বায় প্রকাশ করা হয় অর্থাৎ “ভালবাসা” হয়, “ঘৃণা”ও হয় কিন্তু আলাদা আলাদা ভাবে। যখন “এবং” দিয়ে দুটো আলাদা অনুভূতিকে সংযুক্ত করা হয়, তখন অনুভূতি দুটো একই সঙ্গে বা যুগপৎভাবে ঘটে।
এমনিতেই, “ভালোবাসা”, “প্রেম”, “সম্পর্ক” ইত্যাদি শব্দগুলো বেশ জটিল, সহজভাবে ব্যাখা করা যায় না, একেকজন একেকভাবে ব্যাখা করে, কখনো মনে হয়, প্রেম, ভালোবাসা একই অনুভুতির ভিন্ন শব্দে বহিঃপ্রকাশ আবার কখনো মনে হয়, কাছাকাছি হলেও, বেশ পার্থক্য আছে। বেশ জটিল!!!
“ভালোবাসা”র বিপরীত শব্দ হিসেবে কি “ঘৃণা” শব্দকে বেছে নেয়া যায়? নিশ্চই না (অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়) অথবা, এমন কি হতে পারে-শুধুই “ভালোবাসা” বা শুধুই “ঘৃণা” অথবা ভালোবাসা এবং ঘৃণা একের পর অন্যটি (এবং বিপরীতভাবেও তাই)। আসলেই কি তাই? এতো সমীকরণ দিয়ে কি এ ধরনের অনুভূতির প্রকাশ ঘটে, ঘটানো যায়?
কিন্তু কবি এখানে, একটার পর, অন্যটির প্রবেশ দেখিয়েছেন, প্রথমে নানাভাবে “ভালোবাসা”র বহিঃপ্রকাশ এবং পরে, ঘৃণা করতে শুর করা। যাকে ভালোবাসা যায় তাকে ঘৃণা করা যায়? ভালোবাসা মানে কি, তাকে কাছে পাওয়া, নিজের করে পাওয়া? আর সেটা না পেলেই ঘৃণা তৈরি হয়ে যাবে?
তাছাড়া, কবি শুরু থেকে অনেকটাই শেষ পর্যন্ত, ভালোবাসাকে শারীরিক রূপের মধ্যে দিয়ে দেখেছেন, যদিও হৃদয়কে ভালোবেসেছেন। কিন্তু শেষে এসে বললেন- “তোমায় আমি ভালোবাসি এবং ঘৃণা করি, তার মানে তোমাকে সব সময় মনে রাখি”।
খুব সাধারনভাবে এবং সহজ করে আমরা বুঝতে পারি, ভালোবাসার কাছে হেরে গেলে, মানুষের মনে বিরহ জেগে উঠে কবি সেটাকেই ঘৃণা শব্দ দিয়ে প্রকাশ করেছেন। যদিও ভালোবাসার কাছে মানুষ কিভাবে হেরে যায়, তা বোঝা বেশ মুশকিলশ (সেটা সম্ভব যদি কেবলমাত্র ভালোবাসাকে কাছে পাওয়াকে বোঝানো হয়)
কবি’র জন্য রইলো শুভেচ্ছা