আলোচনা ২১৬
সাধারনত মানুষ তার দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রনাগুলোকে প্রকাশ করতে চায় না, লুকিয়ে রাখতে চায়। কষ্টকে কেন্দ্র করে আশেপাশের মানুষের, শুভাকাঙ্খি মানুষের নানা ধরনের তীর্যক মন্তব্য আসে, কখনো বা সহানুভূতির মুখোশে বাকা হাসি বুকে বেঁধে। সে কারনেই মানুষ যথা সম্ভব তার যন্ত্রনা, তার কষ্ট কে সবার আড়াল রেখে নিজেই ভোগ করতে থাকে। নিজের যন্ত্রনার সাথে মানুষের তীর্যক মন্তব্য অনেক সময়ই উপর্যপুরী কষ্ট তৈরি করে যা থেকে মুক্তি পেতে চায় মানুষ।
কিন্তু কবি আর ইসলাম তার কাব্য “তুমি আমার সরব দুঃখ”তে বিপরীতমুখী চিত্র একেছেন বেশ সাহসীকতার সাথে। তিনি দুঃখকে সরব করেছেন, উন্মুক্ত করে দিয়েছিন। তিনি দুঃখকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছেন, দুঃখকে প্রতিদিনের সঙ্গী করে নিয়েছেন। কেউ কেউ এটাকে দুঃখ বিলাস বলতেই পারেন কিন্তু কবি, ‘তুমি’ চরিত্রকে নিজের দুঃখের সাথে জড়িয়ে রেখেছেন ‘তুমি’কে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই।
দুঃখকে সরব রাখার নানামুখী প্রচেষ্টার মাধ্যমে ‘তুমি’র প্রতি কবির ভালোবাসার প্রগাঢ়তা প্রকাশ পায়, তুমি’কে অনুভব করার এক ভিন্ন মাত্রা পায়। প্রতিদিনের যাপিত জীবনে ‘তুমি’র সরব উপস্থিতি কবিকে দুঃখিত করে তোলে ঠিকই কিন্তু এই ‘অনুপস্থিতির মধ্যে উপস্থিতি”কে সরব করে তোলার এই দুর্দমনীয় প্রচেষ্টা, পাঠিক হিসেবে আমরা আর দুঃখ বিলাসি বলতে পারি না বরং দুঃখের সাথে বসবাসকে, দুঃখের সরব উপস্থিতিকে আমরা সাধুবাদ দিতেই পারি।
খুবই সহজ সরল এক প্রাঞ্জল ভাষায় কবি দুঃখকে সরব করেছেন যা পাঠকে দৃষ্টি এড়াবার সুযোগ নেই। বিকেলে বিষন্নতায় যেমন “তুমি’ আছে তেমনি কুয়াশা ভোরের শীতের কাপনে ‘তুমি’র উপস্থিতি দেখতে পাই। একাকীত্বের নিস্তব্ধতায় যেমন ‘তুমি” থাকে তেমনি দিনের শেষে অলস সময়েও ‘তুমি’ থাকে সরবে।
এই যে প্রতিনিয়ত ‘তুমি’র উপস্থিতি এবং একই সঙ্গে দুঃখ ভর করে বেঁচে থাকা, সত্যিই এক অসাধারণ অনুভুতির চর্চা। খুব অল্প কথায় কবি “তুমি” চরিত্রকে পাঠিকের কাছে পরিচিত করে তুলেছেন এক “দেবী”তুল্য চরিত্রে, যেখানে কোন দেহের আকাঙ্খা নেই, কোন কাম চরিতার্থের ইচ্ছের প্রকাশ নেই, প্রতিনিয়ত ছুঁয়ে দেয়ার গুপ্ত বাসনা নেই, কেবলই “তুমি”কে অনুভবে রাখার এক তীব্র আকুতির দেখা মেলে।
কবিতায় “তুমি” এক জীবন্ত ভালোবাসার এবং বিরহের সম্মিলিত চিত্রায়ন পাঠকের মনে জায়গা করে নিয়েছে নিজ গুনেই। কবি’র জন্য রইলো শুভেচ্ছা।