আলোচনা ১৫২
লিখতে লিখতেই জ্ঞানের বিকাশ ঘটে আবার জ্ঞানের যথার্থ প্রয়োগই কেবলমাত্র একটি লেখা তৈরি করতে পারে। শব্দের পর শব্দ দিয়ে শব্দের পিরামিড কিংবা শব্দের কোলাহল তৈরী করা যায় হয়তো কিন্তু কোন লেখা তৈরী হয় না। কাগজ, কলম লেখার অনুষঙ্গ মাত্র, লেখার জন্য চাই জ্ঞান এবং জ্ঞানের প্রয়োগের জন্য চাই লেখার সাধনা, এই দুয়ের সমন্বয় না হলে, সবই অর্থহীন।
কবি, উবায়দুল্লায় আল ফারুক, তার “কলম কালি” কবিতার মূল ভাবার্থ এটাই, যদি সঠিকভাবে বুঝে থাকি। তিনি ধর্মীয় ভাবধারায় কবিতাটির আদল দেয়ার চেষ্টা করেছেন, সে কারনে “ইলম” শব্দ ব্যবহার করেছেন, কিন্তু মুলত ইলম দ্বারা জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগই বোঝানো হয়।
কেউ ভালো কোন ছবি তুললে, ফটোগ্রাফারকে জিজ্ঞেস করে, ক্যামেরার মডেল কি? ক্যামেরা কি এসএলআর কি না ইত্যাদি। এ প্রশ্নের মাধ্যমে ফটোগ্রাফার এর দক্ষতার সাথে উন্নত প্রযুক্তির একটা সম্মেলন বোঝার চেষ্টা করেন যদিও এতে ফটোগ্রাফার এর দক্ষতাকে কিছুটা খাটো করা হয় কেননা একটা ভালো মানের ক্যামেরা থাকার পরও সবাই ভালো ছবি নাও তুলতে পারেন। ফলে প্রযুক্তির গুন আছে এটা যেমন সত্য, তারচেয়েও বড় সত্য হলো ফটোগ্রাফার এর দক্ষতা, মেধা এবং সাধন।
কিন্তু কি আশ্চর্য, কোন একটি ভালো লেখা পড়ার পর, কেউ লেখককে জিজ্ঞেস করে না, কলমটা কোন কোম্পানীর কিংবা কলমটা কতো দামের? এখানে কলমের ভূমিকা একেবারেই গৌণ, পুরো কৃতিত্বই লেখকের। একইভাবে কাগজ কত ভালো কিংবা কাগজের পুরুত্ত কতোটা তার উপর ভালো লেখা নির্ভর করে না। ভালো লেখা নির্ভর করে, লেখকে মগজের উপর। লেখকের মেধা, প্রজ্ঞা, তার জ্ঞান, তার কল্পনা প্রসূত দৃশ্যায়ন ইত্যাদি। ভালো লেখার জন্য একজন লেখকের নিজের উপর পূর্ন আস্থাও রাখতে হয়।
আবার বেষ্ট সেলার বই মানেই ভালো মানের বই নাও হতে পারে, ভালো লেখকের বই নাও হতে পারে। যদিও আমরা এই ভুলটা অনেকেই করে থাকি। খুঁজে খুঁজে বেষ্ট সেলার বইগুলো বেশী কিনে থাকি কিন্তু বেষ্ট লেখককে খুঁজি না। কোন বই বেষ্ট সেলার খেতাব অর্জনের জন্য ভালো লেখার পাশাপাশি মার্কেটিং কৌশল, বিনিয়োগ (বাধাই, ভালো মানের কাগজ ইত্যাদি) ইত্যাদিও খুব জরুরী।
কবি, নিজের জ্ঞান ছাড়াও লেখার জন্য “আল্লাহর সহায়তা”,”আল্লাহর রহমত” এর কথাও বলেছেন, শুধুমাত্র নিজের জ্ঞান থাকাটাই যথেষ্ট নয়, যতক্ষন পর্যন্ত আল্লাহর রহমত না পাওয়া যাবে, ততক্ষন নিজের জ্ঞানও কাজে লাগানো যাবে না।
ফলে পুরো কবিতার ভাবার্থ করলে দাঁড়ায়, সর্বপ্রথম প্রয়োজন আল্লাহর রহমত ও সাযায্য, তারপর নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা বা ইলম, কেবলমাত্র এদুটো বিষয়ের সংযোগ ঘটলেই, কাগজ কলম সরোব হয়ে উঠবে অন্যথায় শুধু কাগজ ও কলমের কোন ভ্যালু নেই। কবিতাটি ধর্মীয় ভাবধারায় লেখা বলে কেউ কেউ একটু ভিন্ন ভাবেও ভাবতে পারেন।
কবির জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা