আলোচনা ১০৭
আমরা সবাই জানি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন বিস্তৃত রয়েছে বাংলাদেশ এবং ভারতের বেশ কিছু অংশ জুড়ে। ২০০৪-২০১০ সাল পর্যন্ত আমি বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবন ইস্যু নিয়ে আজ করতাম। সুন্দরবনকে ঘিরে নানা ইস্যু নিয়ে কাজ করার ফলে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল আমার। বহুবার কোলকাতায় গিয়েছিলাম,আন্তর্জাতিক সেমিনার এ পেপার উপস্থাপন সহ কোলকাতা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় এনজিও দের সাথে একসাথে কাজ করার জন্য। কবি সমীর প্রামাণিক (অম্বরীষ কবি) সেই সুন্দরবন নিয়ে যখন কাব্য রচনা করলেন, পুরনো অনেক স্মৃতি মনে পড়ল ফলে আলোচনায় অংশ নেয়া অনিবার্য হয় পড়লো।
সুন্দরবনকে ঘিরে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় চক্র গড়ে উঠেছিল নানাভাবে এর থেকে বেনিফিট নেয়ার জন্য। তার মধ্যে এশিয় ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং শেল কোম্পানি অন্যতম। তাদেরই এদেশীয় দোসররা সুন্দরবনকে ধ্বংস করার এক চক্রান্তে লিপ্ত। প্রকৃতির এক অসীম সম্পদ সুন্দরবনের উপর ক্রমাগত মানুষের অত্যাচারে অত্যাচারে হাপিয়ে উঠেছিল।
তারই প্রেক্ষিতে কবি সমীর প্রামাণিক এর কাব্যের ব্যাখা অনুযায়ী, প্রকৃতি বিরূপ হয়ে উঠে এবং ‘আয়লা’রূপে মানুষের উপর আক্রমণ করে। যে কোন প্রাকৃতিক ধ্বংসলীলার জন্য মানুষের অবিবেচিত কার্যকলাপই দায়ী। প্রকৃতি এমনি এমনি মানুষের উপর কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায় না। মানুষের কর্মফলের বিপরীত প্রতিক্রিয়া হিসেবেই প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নেয়। তার একটি রূপ আমরা কয়েক বছর আগে দেখেছি সুন্দরবন এলাকায় যার নাম ‘আয়লা’, বেশ কয়েক বছর অতিক্রম হয়েছে কিন্তু ‘আয়লার’ ভয়াবয় ক্ষতি আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আয়লার এক ভয়ঙ্কর রূপ প্রতিফলিত হয়েছে সুন্দরবনের উপর যার ব্যাখাই কবি সমীর তার কাব্যের প্রতি লাইনে ব্যাখা করেছেন।
অত্যাচারি অসভ্য মানুষ এসিড দিয়ে নারীর কোমল শরীর দগ্ধ করে দিলে তার বাহ্যিকরূপ যেমন হয় তার সাথেই তুলনা করেছেন ‘আয়লা’র আক্রমনে সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থাকে। শত শত বছর ধরে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের সৌন্দর্য এক নিমিষেই হারিয়ে যায় আয়লার আক্রমনে, প্রকৃতির প্রতিহিংসায়। অনেক বছর পার হয়েছে, ধীরে ধীরে সুন্দরবন আবার নিজেকে গুছিয়ে নিতে চেষ্টা করছে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে কিন্তু এখনও পুরোটা সম্ভব হয়ে উঠেনি, চারদিকে সব নুতন গাছের সমারোহ, পুরনোরা সব হারিয়ে গেছে আয়লার কারনে। আয়লার করাল গ্রাস থেকে সুন্দরবনই অনেকটা নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে মানুষকে রক্ষা করেছে কিন্তু অকৃতজ্ঞ মানুষ এখনো নিজেরাই আবার সুন্দরবনের ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছে। সুন্দরবনকে একসাথে মানুষ এবং প্রকৃতি উভয়ের সাথে লড়াই করেই টিকে থাকতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
অসাধারণ এক কাব্য উপহার দেয়ার জন্য কবির জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা।