আলোচনা ৯২
নুতন অতিথি যখন পৃথিবীতে আসে, আলো ঝলমল করে উঠে চারদিক, প্রকৃতি হেসে উঠে, নুতন অতিথির বাবা মা, আত্মীয় স্বজন আনন্দে আত্মহারা হয়ে মিষ্টি বিতরণ করে থাকে, বাচ্চাকে কেন্দ্র করে নুতন দিনের স্বপ্নে বিভোর থাকে দম্পতি। কিন্তু বাচ্চাটির আগমন সুচনা হয় ‘কান্না’ দিয়ে, বৈজ্ঞানিক ব্যাখা মায়ের গর্ভে নিরাপদ অবস্থান থেকে পৃথিবীর আলোয় অভিযোজন এর প্রক্রিয়া হিসেবেই কান্না। আমাদের মত সাধারণ মানুষ যারা প্রতিনিয়তই হোঁচট খাচ্ছে টিকে থাকার সংগ্রামে, তাদের কাছে ভিন্ন ব্যাখা হতে পারে, পৃথিবী নামক ভিন্ন এক দোজখ খানায় পদার্পণের কারণে বাচ্চাটি কান্না দিয়ে তার যাত্রা শুরু করে। নুতন অতিথির ভবিষ্যৎ যাই হউক, তাৎক্ষনিকভাবে সবাই খুশী, আনন্দে উদ্বেলিত থাকে।
কিন্তু সেই বাচ্চাটির বড় হবার পর তার মৃত্যু কামনা কেউ করতে পারে? কেনই বা মৃত্যু কামনা হতে পারে? তার কি অপরাধ? কি কি কারনে তার মৃত্যু আকাঙ্ক্ষিত হতে পারে? কারা তার মৃত্যুতে খুশী হতে পারে এবং কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে কবিতায়, অনাকাঙ্খিত উত্তরের মাধ্যমেই কবি তানভীর সিকদার মানবতার বীভৎস চিত্র এঁকেছেন ‘স্বপ্নের মৃত্যু’ কাব্যের মাধ্যমে।
একটি কাল্পনিক মৃত্যু এবং পরবর্তী লাভ লোকসান হিসেব, বেড়িয়ে পরে থলের বেড়াল-
একটি মৃত্যু হলে ঋণগ্রস্থ বাবা’রা বেঁচে যায়, চাকরির জন্য ঘুষ দিতে হবে না, ভাইবোন মা’কে দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না, বন্ধুরা বেঁচে যায় বন্ধুকে মাস শেষে ধার দেয়া থেকে, অহেতুক মানুষকে কষ্ট করে বেকার কবি’র কবিতা পড়তে হবে না, কষ্টে কেনা পায়ের জুতার উপর সেলাই অত্যাচার থেকে জুতো জোড়াও বেঁচে যায়, সমাজ বেঁচে যায় নিয়মের কাঠামোয় না থাকা মানুষ নিয়ে, চেয়ার দখলের খেলায় কেউ না কেউ তো খুশি হয় বটে……… ঘুনে ধরা এ সমাজ একদিন যে অতিথিকে দেখে খুশী হয়েছিল আজ তার মৃত্যুতেই খুশী হচ্ছে, কি অশ্লীল এই সভ্যতা!! মুখোশে মুখোশে ছড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোই তৈরি করে এমন নির্মম বাস্তবতা।
যদিও বাবা মা ভাই বোন মৃত্যুতে খুশী হয়েছিল কিন্তু সে খুশীটুকু ছিল ‘কষ্টের এক ভিন্ন প্রকাশ”। দিন শেষে মৃত্যুতে মায়ের হাসি চিরকালের জন্যই মরে যায়, বোনের আদুরে আবদারগুলো মিলিয়ে যায় নিঃশ্বাসে। কবি মনের ভেতর অনেক কষ্ট নিয়ে এ নষ্ট সমাজের চিত্র এঁকেছেন একটি মৃত্যু কল্পনার মাধ্যমে, কল্পনা হলেও বাস্তবতা আসলে এটাই।
কবির প্রতি অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা রইলো ।