বিশ্লেষণ -৩৬
সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে ‘সম্পর্ক’ এবং ‘সংসার’, নিয়ে চমৎকার এক কাব্য রচনা করেছেন কবি মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান ‘ সম্পর্ক ও সংসার’ কবিতায়। আদিম যুগ পারিয়ে মানুষ যখন গোষ্ঠী বদ্ধ জীবনের সুচনা করেছিল এবং বিয়ে প্রথার মাধ্যমে পরিবার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিল তখন থেকেই মানুষ পরিবারের/ সংসারের প্রতিটি সদস্যের সাথে একে অপরের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে জীবন প্রণালীতে নূতন সভ্যতার ভীত গড়ে তুলেছিল। শত শত বছর ধরে এভাবেই মানুষ সুখী এবং অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামো এই শক্ত ভীতকে কাপিয়ে তুলল ভোগবাদী মানুষিক ব্যাধি তৈরির মাধ্যমে। ধীরে ধীরে মানুষ কর্পোরেট সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে, সম্পর্কের গভীরতা অনুভবের স্তর থেকে বেড়িয়ে পন্য ভোগের মাধ্যেমে সুখ খোঁজার চেষ্টায় নিরন্তর ব্যস্ত হয়ে পড়ছে ফলে সম্পর্কের ভীত কেপে উঠছে। একবিংশ শতাব্দীতে ভোগবাদী মানুসিকতা অনেকটা ব্যাধির আকার ধারন করছে যা পরিবার তথা একে অপরের সম্পর্কের মাত্রাকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে তুলছে।
কবিতায় কোন এক সংসারের একদিনের খণ্ড চিত্রে ধরা পড়েছে সম্পর্কের গড়ন এবং মাত্রা। তিনি খুব অসুস্থ বোধ করছেন, বিশ্রাম নিচ্ছেন বাসায়, কিন্তু ভাবলেন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার, লেখালেখির কাজ ছেড়েই উঠলেন, তারপর যেতে যেতেই ঘটলো নানা ঘটনা, সে বর্ণনার মাধ্যমেই কবি তুলে ধরেছেন সম্পর্ক এবং সংসারের জটিল রূপ।
তিনি চিকিৎসকের কাছে যেতেই যেতেই মেয়ের ফোন পেলেন, আবদার “আমার জন্য বরফ মালাই”, গিন্নির ফোন “সময় পেলে, নিয়ে এসো তেল পিয়াঁজও শেষ, যদি পারো, এনোতো একটি বেল।“, তারপর ছেলের আবদার “আব্বু তুমি আসার পথে, এনো একটি রিমোট”, সবার আবদার আর প্রয়োজন মেটানোর কথা বলে রাখলেন ফোন, তারপরই তার ভাবনায় এলো নানা সম্পরকের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নানা ভাবনা।
সবাই সবার প্রয়োজনের কথা বলেই ফোন রাখলেন কিন্তু কেউই তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিলেন না, কেউ জানতেও চাইলো না তার অসুস্থতার ভাল মন্দ খবর। ব্যাপারটা লক্ষ করেই দুঃখে তার পরাণ ফাটে । ব্যাপারটা কাকতালীয় হতে পারে কিন্তু মুল ঘটনা হোল, সবাই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, নিজের প্রয়োজনটাই আগে চাই, কিন্তু সম্পর্কের মাত্রা তো এমন হবার কথা ছিল না। আমাদের ভোগবাদী মানুষিকতা সারাক্ষন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে আমাদের। কবি তাই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আসলে সম্পর্ক কি”, শুধুই দায়িত্ব পালন, শুধুই অন্যের প্রয়োজন মেটানো কিংবা শুধুই কি অভিনয়ের মাধ্যমে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা?? সেখানে কি কোন হৃদয়ের তাপ থাকে নাকি চাহিদার বাড়াবাড়িই মুখ্য? তবে অনেক সম্পর্কের মাঝে কবি খুজে পেয়েছেন একটি মাত্র সম্পর্ক যার কোন তুলনা হয় না, “মা এবং সন্তানের মাঝের সম্পর্ক’, তাই কবি শেষ করেছেন- “একজন শুধু নিত খবর চোখের পানি ছেড়ে, মা জননীর কথা মনে পড়ে বারে বারে। কবির জন্য শুভেচ্ছা রইলো ।