আলোচনা ২২৬
কখনো কখনো এমন হয়, ২/৩ পৃষ্ঠার একটি কবিতা আলোচনা করলে এক প্যারা হয় আবার ৪ লাইনের কবিতাও ২/৩ পৃষ্ঠার আলোচনা হতে পারে। বিষয়টা নির্ভর করে, কবিতার প্রকৃতির উপর। রূপক বা উপমা নির্ভর কবিতাগুলো অল্প শব্দের, অল্প কথায় হয় কিন্তু ভেতরে লুকানো থাকে সব কথা। বর্ননা ধর্মী কবিতাগুলো সাধারনত ম্যাসেজ নির্ভর হয়, অভিজ্ঞতা নির্ভর কিংবা কোন একটি দৃশ্যপটকে বর্ননা করা হয়। সেক্ষেত্রে একটি বা দুটি কিংবা দুয়ের অধিক বার্তা/ম্যাসেজ প্রদান করা হয়। দুধরনের কবিতা পাঠককে দুভাবে আলোড়িত করে, পাঠকের মন মেজাজের উপরও কবিতার পাঠকপ্রিয়তা নির্ভর করে থাকে।
আলোচ্য কবিতাটি কবি রত্না দেব বিশ্বাস,বর্ননা ভঙ্গিতে রচনা করেছেন। কবিতায় ম্যাসেজও বেশ পরিস্কার। আমি মূলত আলোচনার জন্য কবিতাটি নির্বাচন করেছি, কবিতার শিরোনামের কারনে। শুওয়ের বাচ্চা শব্দটি, গালি হিসেবে প্রায়শই শুনে থাকি এমনকি আমাদের চেনা জানা পারিবারিক পরিমন্ডিলেও গালিটি বেশ প্রচলিত।
বাংলা ভাষায় প্রচলিত গালিগুলোর একটা বিশ্লেষন করেছিলাম আমি অনেক আগে, সেখানে অনেকগুলো লেন্স ব্যবহার করেছিলাম, জেন্ডার লেন্স, মানবিকতা লেন্স, পশু প্রেম লেন্স ইত্যাদি। সেখানে জেন্ডার লেন্স দিয়ে মেপে দেখেছিলাম, প্রায় ৫০% প্রচলিত গালিগুলো মূলত পুরুষতান্ত্রিক আবহে বেড়ে ওঠার কারনে মানুষ ব্যবহার করে এবং প্রচলিত, সেই গালিগুলো পুরুষতান্ত্রিক আনন্দ তৈরি করে (যেটাকে আমরা সভ্য সমাজ বিকৃত আনন্দ বলে থাকি সেটাই গালি ব্যবহারকারী স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে থাকে। লেখাটি অনেকদিন আগে হবার কারনে হারিয়ে গেছে)।
গালির সাথে পশুর (বিশেষ করে তিনটি-কুকুর, শুকোর, গাধা) নাম যুক্ত হয় কেন, কবি সে প্রশ্নটি রেখেছেন কিন্তু কোন উত্তর দেননি, এর পেছনের ইতিহাস আমিও জানি না। এটা একটা গবেষনার বিষয় হতে পারে, বাংলা ভাষায় বিশেষ করে কথা ভাষায় কবে, কখন, কিভাবে পশুর নাম যুক্তি করে গালি তৈরি হলো। কুকুর গাধা এবং শুকোর এর সাথে সম্পর্কযুক্ত গালিগুলো নেগেটিভ অর্থে অর্থাৎ কাউকে হেয় করার জন্য করা হয় আবার “বাঘের বাচ্চা”, কাউকে প্রশংসা বা বীরত্ব প্রকাশের জন্য বলা হয়, হরিনের মতো চোখ, সৌন্দর্যয়ের প্রতীক হিসেবে বলা হয়। এরকম আরো কিছু গালি বা কথ্য আমাদের মধ্যে প্রচলিত, সেগুলোও ভিন্ন ভিন্ন কারনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে যেমন-মাছি মারার কেরানী, বিচ্ছু কোথাকার, শেয়ালের মতো চালাক, গন্ডারের চামড়া হলে অফিসে উন্নতি করা যায়, একটু মোটা মানুষকে “হাতীর বাচ্চা বলে গালি দেয়া হয়”, সাপের মতো ফোস করে ওঠে ইত্যাদি ইত্যাদি।
কবি রত্না দেব বিশ্বাস ভৌমিক, এরকম দুটো পশুকে কেদ্র করে প্রচলিত গালি সংস্কৃতি নিয়ে কাব্যটি লিখেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, সৃষ্টির শ্রষ্ঠ জীব মানুষ নিজেদের পশুর সাথে মিলিয়ে গালি দিয়ে কি নিজেদের নীচে নামাচ্ছেন নাকি পশুদের উপরে তুলে দিচ্ছেন? ভাবনার বিষয় বটে!! কবিতার মুল বক্তব্য নুতন করে আর কিছু বলার নেই, দুটো প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই কবিতার ম্যাসেজ, ১। নৈতিকতার প্রশ্ন ২। শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্ন।
কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা