আলোচনা ৯৯
কবি অমরেশ বিশ্বাস সমসাময়িক বাস্তবতায় ‘স্কুল ব্যাগ’ শিরোনামে চমৎকার একটি কাব্য রচনা করেছেন বিশেষ করে কবিতার বিষয়বস্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের সাথে খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এতটা নাজুক অবস্থায় ছিল না, যে কোন অর্থেই অর্থাৎ গুনগত মান, প্রদ্ধতি কিংবা ব্যয় সূচকে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই নাজুক এবং অবৈজ্ঞানিক।
আজকাল আর শিক্ষার মধ্যদিয়ে জ্ঞান অর্জন করা মূল উদ্দেশ্য থাকে না, কর্পোরেট যুগে মার্কেট উপযোগী একাডেমীক কিছু শিক্ষিত কর্মী দরকার আর সে প্রয়োজনেই শিক্ষার আয়োজন, ফলে শিক্ষাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নানা রকম বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং রকমারি আয়োজন। তার মধ্যে প্রধান প্রধান আয়োজনগুলো, কোচিং সেন্টার, স্কুল কলেজগুলো স্বতন্ত্রতা বজায় রাখার নামে খাতা, কলম বিক্রি এবং ছাত্র ছাত্রীকে কেনার জন্য বাধ্য করা, অপ্রয়োজনীয় বইয়ের সম্ভার কোর্সে সংযুক্ত করা এবং বিক্রয়ের মাধ্যমে মুনাফা লাভ করা ইত্যাদি। ফলে ছাত্র ছাত্রীরা বইয়ের ভারে ভারাক্রান্ত, কোচিং এর ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে জীবনের সুন্দর সময়গুলোকে অপচয় করে, সেই সাথে একটি ফলপ্রসূ ভবিষ্যৎ নির্মাণের সুযোগ থেকে বঞ্ছিত হয়। কবি তার কবিতায় এই প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। কবির ভাষায়-
“স্কুল ব্যাগে পিঠ বেঁকে যায়, যায় না হওয়া সোজা, এখন থেকেই শিখছি নাকি, বয় কি করে বোঝা? জ্ঞানের বোঝা মাথায় নিয়ে চলতে মোরা চাই, বইয়ের বোঝা ভীষণ ভারি, রেহাই কি তার নাই। বইছি বোঝা চাপিয়ে দেওয়া, কি আছে নেই জানা ভাবনা, কভু শেষ হবে কি, এসব বোঝা টানা।বই ভরা ব্যাগ পিঠে নিয়ে, হচ্ছে চলা দায়, বড়রা বুঝেও বোঝে না, নাকি বুঝতে নাহি চায়”
কবি খুব আফসোস করে বলেন, জ্ঞানের বোঝা অপেক্ষা বইয়ের বোঝা অনেক বেশী তাই সোজা হয়ে দাঁড়ানো যায় না, অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়, নিজের উপর আর আস্থা রাখা যায় না । বইয়ের বোঝা বহন করার জন্য অন্তত একজন লোক দরকার, নিজের বই আর নিজে ম্যানেজ করা যায় না । পড়াশুনা অপেক্ষা বই ব্যবস্থাপনা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। কবির ভাষায়
“জ্ঞানের বোঝা না চাপিয়ে, চাপাও বইয়ের বোঝা, বড় মুশকিল হয়েছে যে তাই দাড়ানো হয়ে সোজা। বই ভরা ব্যাগ দাও চাপিয়ে, চলি কোন ক্রমে, পড়াশুনায় মন বসে না, ক্লান্ত বড় শ্রমে”
কবির প্রতি অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা রইলো ।