আলোচনা ২২০
মানব জীবনের এক চরম বাস্তবতা এবং দর্শন নিয়ে কাব্য “সবার সবটা দিতে নেই"। নিঃসন্দেহে জীবন অভিজ্ঞতা নির্ভর এক স্পষ্ট উচ্চারন। এরকম উচ্চারন বই পড়ে শেখা যায় হয়তো কিন্তু অনুভবের মাত্রা জ্ঞান থাকে না। কবিতাটি পড়ে মনে হয়েছে, অনুভবের অনভূতি থেকেই লেখা হয়েছে।
মানব জীবন আদত একটি ভারসাম্যপূর্ন জীবন, সৃষ্টির শুরুতেই তা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মগ্রন্থে ভিন্ন আদলে এবং হাল আমলে নানা মনীষীর বানীতেও তা স্পষ্ট। নানারকম বাস্তবতা, প্রেক্ষিত এবং ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে মানব জীবন অতিবাহিত হয়, এক জীবনে অনেক রকম বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় মানুষকে। ভারসাম্যপূর্ন জীবন উতরে যায় নানা প্রতিকূলতা কিন্তু ভারসাম্যহীন হলেই জীবনের ভারসাম্য হারিয়ে যায়, অতল গহ্বরে তলিয়ে যায় জীবন।
ভারসাম্য থাকবে কোথায়?
জীবনের পরতে পরতে ভারসাম্য রক্ষার তাগিদ থাকে, যে কোন পরিস্থিতি কিংবা প্রেক্ষিত বিবেচনায় তা সত্য। প্রকৃতিতে তার নির্দর্শন আছে ভুরি ভুরি যেমন-সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, ভয়-প্রশান্তি, হারানো-প্রাপ্তি ইত্যাদি। আবার প্রকৃতির নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষের আচরনের মধ্যেও ভারসাম্য দরকার হয়ে পরে যেমন-হতাশা-উল্লাস, দেয়া-নেয়া, প্রেম-বিরহ, শাস্তি-পুরস্কার, গুনকীর্তন-সমালোচনা ইত্যাদি।
যে কোন প্রকার ভারসাম্যহীনতা, চরম দুর্যোগ নিয়ে আসতে পারে, অনেক উদাহরন হতে পারে-শুধুই উল্লাসে মত্ত থাকা, বেহিসেবী খরচ, নিজেকে উজার করে বিলিয়ে দেয়া, কেবলই অন্যের প্রশংসা করা, বিশ্রামহীন পরিশ্রম করা ইত্যাদি।
ভারসাম্যের মাত্রাজ্ঞান, পুথিগত বিদ্যায় কিংবা অন্যের গাইড করা সূচকে সব সময় মাপা নাও যেতে পারে কিন্তু বাস্তবতার সাথে সম্পৃক্ততা এবং গভীর পর্যবেক্ষন ক্ষমতাই কেবল ভারসাম্য রক্ষার মানদন্ড ঠিক করে দিতে পারে। ভারসাম্যেরও একটা ভারসাম্য দরকার হয়ে পড়ে। কোন প্রেক্ষিতে, কখন, কারসাথে, কতটুকু ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে তার কোন নির্দিষ্ট প্রেসক্রিপসন থাকে না। প্রেক্ষিত বিবেচনায় তার কিছু তারতম্য হতেই পারে। এ বিষয়গুলোই কবি তার কাব্যে বলতে চেয়েছেন।
বিলাতে বিলাতে শূন্য হইও না...
শূন্যতা এক বিশাল হাহাকার।
নিজের সবকিছু অন্যকে বিলিয়ে দিয়ে (যেমন-প্রেম, ভালোবাসা, সম্পদ, স্নেহ, মমতা...), উজার করে দিয়ে নিজেকে শূন্য করে তোলার মধ্য দিয়ে ভারসাম্যতা নষ্ট হয়। নিজের ভালো থাকা তখন অন্যের উপর নির্ভর হয়ে যায়। অন্য নির্ভরতা নিজের মধ্যে শূন্যতা তৈরি করে, হাহাকার তৈরি করে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। চারদিকে মূখোশের ছড়াছড়ি, মখোশ বেছে জীবন চলাতেও ভারসাম্য দরকার। জীবনে কখনো অন্যকে জিতাতে হয় নিজের ভালোর জন্য আবার কখনো নিজে জিততে হয়, প্রয়োজনে একটু বেঁকে গিয়েও, অর্থাৎ নানা পরিস্থিতিতে নিজেকে ভারসাম্যপূর্ন করে রাখতে হয়, দাড়িপাল্লার নিক্তির মতো জীবনের ভারসাম্য হবে ডান-বাম, উপর-নীচ, সামনে-পেছনে সবখানে, সবসময়।
যাদের পিঠ লাগে দেওয়ালেতে
ঠক্করে ঠক্করে জানি তারা শেখে
অনেক সময়, মানুষ ভারসাম্য বুঝতে পারে না, পুথিগত বিদ্যায় সে সুযোগ থাকে না সব সময় জীবন পাঠশালা থেকেই শিখতে হয় এবং পরবর্তীতে কাজে লাগেতে হয়। সে কারনেই প্রবাদে বলে- কেউ দেখে শেখে, কেউ ঠেকে শেখে। সব সময় ঠেকে শিকতে হবে, এমন কোন কথা নেই, আবার দেখেও যে শেখা যাবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। ফলে দুটো পদ্ধতিই কার্যকরী কিন্তু মূল বক্তব্য একটাই “ভারসাম্যপূর্ন আচরন” চাই জীবনে সব সময়।
আসরে খুব ভালো একটি কাব্য উপহার দেয়ার জন্য, কবি’র জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা