আলোচনা ১৯৭
সাপ লুডো খেলা আমরা ছোটবেলায় অনেক খেলেছি, বলা যায় আমাদের একটি প্রিয় খেলা ছিল এটি। লু্ডো খেলা ছিল দুরকম, একটি উপরে উঠতে গিয়ে সাপের মুখে পরে যায় এবং সাপের পেটের ভিতর দিয়ে নীচের দিকে লেজ দিয়ে বের হয় অর্থাৎ উপর থেকে বারবার নীচে পরে গিয়ে গন্তব্যে আর পৌঁছানো হয় না। অন্যটি ছিল, একজন অন্যজনের গুটি খেয়ে ফেলে, একাধিক ব্যক্তি যখন এই খেলাটি খেলে, তখন অনেক সময় দুই বা তিনজন মিলে নিজেদের মধ্যে আতাত করে, নিজেরা নিজেদের গুটি খায় না, শুধু একজনকে ঘায়েল করার জন্য, নিজেদের মধ্যে গোপন চুক্তি করে এবং সে অনুযায়ী গুটি চালে। ছোটবেলায় যখন খেলতাম, তখন তো আর রাজনীতির মারপ্যাচ বুঝতাম না (এখনো যে খুব ভালো বুঝি তাও না), নিজে হেরে গেলে খুব কান্না পেতো, কিন্তু সেই হারটা যে বিপরীত পক্ষের আতাত করার ফসল, সেটা বুঝতে পারতাম না।
অনেকদিন পর সেই সাপলুডো খেলার কাব্যরূপ পেলাম কবি অসিত কুমার রায় এর “সাপলুডো” কাব্যে। কবি একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষন দিয়েছেন সাপলুডো রূপকের মাধ্যমে। আমরা প্রতিনিয়তই পত্র পত্রিকায়, জার্নালে পড়ি কিংবা নিউজে দেখে থাকি, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, স্থানীয় এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষন ইত্যাদি। সেখানে বিজ্ঞ বিশ্লষক হিসেবে থাকেন, পন্ডিত, বুদ্ধিজীবি, একাডেমীসিয়ান, জার্নালিষ্ট সহ নানা অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ। কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষনে এখন পর্যন্ত কোন কবি’’কে উপস্থিত থাকতে দেখিনি, বোধ করি কবিদের রাজনৈতিক বিশ্লেষনে আমন্ত্রন জানানো হয় না। ধরেই নেয়া হয়, কবিদের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষনের সক্ষমতা নেই বা জ্ঞান নেই। আলোচ্য কাব্যে কবি, প্রমান দিয়েছেন, কবিদের রাজনৈতিক বিশ্লেষনে অসাধারন দক্ষতা আছে।
কাব্যে কবি, লাল নীল হলুদ গুটির মাধ্যমে দেখিয়েছেন, রাজনৈতিকভাবে শ্রেনীবিন্যস্ত সমাজ এবং শোষক ও শোষনের হাতিয়ার হিসেবে কিভাবে রাজনীতি তার নিজের খেলা খেলে চলে। কিভাবে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নিজের মধ্যে আতাত করে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে, কিভাবে অন্যকে শোষনের যাতাকলে পিষ্ট করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়। কয়েকটি লাইন দেখা যাক-
তুই খাবি সারা দেশটা জুড়ে
এদিক ওদিক ফুল মালা ছুঁড়ে।
আমি খাব ঠিক তেমনি করে
উইপোকা খায় যেমন করে।
খেয়ে খেয়ে করবো সাবাড়
ঘটি বাটি আর উজার করে ক্ষেত খামার।
রাজনীতির আড়ালে জনদরদী মুখোশগুলো কিভাবে কাজ করে কবি তা উন্মোচন করেছেন, বিশ্লেষন করে দিখিয়েছেন, কিছু জনদরদী কাজের বিনিময়ে হাততালি সংগ্রহ করা যায় এবং জনগনকে আফিম খাওয়ানোর মতো ঘুম পাড়িয়ে রাখা যায়। পুরো কাব্য জুড়েই, রাজনৈতিক গুটি চালকে, সাপলুডো খেলায় গুটি চালের মতো করে ব্যাখা করেছেন। যারা রাজনীতি বোঝেন না কিন্তু সাপলুডো খেলা জানেন, তাদের জন্য এই কবিতাটি রাজনীতি বুঝতে সয়াহক হবে নিঃসন্দেহে।
কবি’র জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা।