আলোচনা ৮১
“ভাত দে হারামজাদা নইলে মানচিত্র খাব” , “রক্ত বেঁচে ভাত খাব”, “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়”, মোটামুটি একই ভাবধারার কাব্য। রক্তে আগুন জ্বলে উঠে, আরেকবার জেগে উঠার শপথ নিতে ইচ্ছে করে, সব ভেঙ্গে চুরে চুরমার করে দিতে সমবেত হতে ইচ্ছে করে.........। শুধুমাত্র ভাতের জন্য কেন মানুষকে রক্ত বিক্রি করতে হবে? রক্ত বিক্রি সেতো উপমা!! মানুষ কতটা কষ্টে থাকলে পরে, রক্ত বিক্রি করার কথা ভাবতে হয়? কোথায় মানবতা আর কোথায় বিশ্ব মোড়লদের তৈরি করা “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ”??
কবি এম ডি সবুজ তার “রক্ত বেচে ভাত খাব”তে এ বক্তব্য নিয়েই পাঠকের সামনে উপস্থিত হয়েছেন। শোষক শ্রেণীর প্রতি সত্য উচ্চারনে বলতে চেয়েছেন, শ্রমজীবী মানুষের চাহিদা খুবই কম, তারা কঠোর পরিশ্রমে, ঘামে অর্জিত উপার্জনেই সন্তুষ্ট, ন্যায় অন্যায় মেনে জীবন পরিচালনাতেই অভ্যস্ত, সীমাহীন কোন চাহিদা তাদের নেই, তারা কেবল জীবনের মৌলিক অধিকারগুলো পেলেই তুষ্ট, দুমুঠো ভাত আর একটু শান্তিতে ঘুম, তাতেই সন্তুষ্ট।
কি অসাধারণ বক্তব্য দিয়ে ক্ষমতার গদিতে আসিন নির্লজ্জ কর্তাদের বলেছেন- “ আমি রক্তের ক্যানভাস এঁকে দিব, বাংলার বুকে। কত রক্ত চাই তোমাদের? আমি রক্ত দিব শুধু আমাকে ভাত ভিক্ষা দেও। বুকের তাজা রক্ত চুষে নেও, ভয় নেই, আমার শরীরে ক্যান্সার নেই”। সাধারন মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, সত্যের পূজারি মানুষ... এরা রঙের ফানুস উড়তে চায় না, এরা ধনীদের মত ব্যাংক থেকে ভিক্ষে মাগে না, ঋণের টাকায় মদ খেতে চায় না, শুধু ঘাম মিশ্রিত জলে ধুয়ে এক মুঠো ভাত খেতে চায়।
কবি খুব আক্ষেপ করে বলেছেন, যে দেশে রক্তের চেয়ে পানির দামি বেশী, রক্তের চেয়ে ভাত দামি, সেদেশে গুণীর কোন কদর থাকবে না, জ্ঞানীর কদর থাকবে না, বিজ্ঞানীর কদর থাকবে না, কেবল চাটুকার আর মোসাহেবদের জয়জয়কার। তাই কবি, রক্ত বেচেই বেঁচে থাকতে চান।, রক্তে বেচেই ভাত খেতে চান।
কতটা অসহায় এবং ক্ষোভ থাকলে পরে, মানুষকে কুকুরের সাথে তুলনা করতে হয়, ভাবা যায় !!! মাঝে মাঝে আমরা নানা ধরনের ব্যঙ্গাত্মক কৌতুক শুনতে পাই, “কুকুর মানুষের চেয়েও বিশ্বস্ত প্রাণী”, ‘কুকুর প্রভু ভক্ত প্রাণী, মানুষের চেয়েও অনেক দামী” ইত্যাদি, অর্থাৎ মানুষ যখন তার বিবেক, মনুষ্যত্ব... হারিয়ে ফেলে তখন আর শ্রেষ্ঠত্বের বড়াই বাদ দিয়ে নিম্ন শ্রেণীর প্রাণীর সাথেই তুলনীয় হয়ে পরে। এখানেও কবি সেরকম ইঙ্গিত দিয়েছেন, “কুকুরের কোন হিংসা নেই,অহংকার নেই, যত সব মানুষের মাঝে,মানুষের রক্তে”
বেশ কিছু উপমার সাহায্যে কবি মানুষের বর্তমান চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন, অংকন করতে চেয়েছেন মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চিত্র এবং শোষক শ্রেণীকে আঘাত করেছেন, মানুষের রক্তের বিনিময়ে, ঘামের বিনিময়ে তাদের গদিতে বসবাস, নুন্যতম বিবেকবোধ যদি থাকে, অন্তত সাধারন মানুষের মৌলিক অধিকারটুকু (ভাত, পানি, বাসস্থান...) নিশ্চিত করতে হবে অন্যথায় মানুষ রক্ত বেঁচেই তার ভাতের চাহিদা মেটাবে ।
কবির জন্য রইলো অভিনন্দন, খুব সুন্দর একটি বিষয় নির্বাচন করার জন্য।