আলোচনা ৫১
এর আগে কোন এক কবিতা আলোচনায় লিখেছিলাম, পুরুষতন্ত্র সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা এবং অনেক প্রশিক্ষনেই ভুল ব্যাখা দেয়া হয় ফলে নারী পুরুষ এর মধ্যে এনিমি ডিসকোর্স তৈরি হয়। পুরুষতন্ত্র এর কারনে কেবল নারীই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, পুরুষরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফলে সামগ্রিকভাবে নারী পুরুষ কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয় বরং পুরুষতন্ত্রই আমাদের মুল শত্রু। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কেবল ‘পুরুষতন্ত্র’ মোকাবেলা করতে পারি, অন্যথায় নয়।
কবি সুজন বিশ্বাস তার কবিতা ‘ পুরুষ হতে যেয়ে’ তে সে কথাই চমৎকার ভাবে লিখেছেন। পুরুষতন্ত্র এর কারনে নারী যেমন উচ্চস্বরে হাসতে পারে না, একই ভাবে পুরুষও কাঁদতে পারে না। নারী যেমন চিৎকার করে কাঁদতে পারঅ, পুরুষ কিন্তু সমাজ প্রদত্ত ব্যক্তিত্তের ধারনার কারনে হাউমাই করে কাঁদতে পারে না, পুরুষকে কাঁদতে হয় লুকিয়ে লুকিয়ে, গুমরে গুমরে। নারী যেমন তার আনন্দ বেদনা নিজের মত করে প্রকাশ করতে পারে না, পুরুষও পারে না। উভয়কেই সমাজের ছক বাঁধা ফ্রেমে বন্দি থেকেই নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে হয় পুরুষতন্ত্র’ এর কারনেই। তাই কবি লিখেছেন-“পুরুষ হতে যেয়ে,আমি কাদঁতে ভুলে গেছি,ভুলে গেছি, কিভাবে চিৎকার করে নিজের কষ্টগুলো দমানো যায়!ব্যক্তিত্ব দ্যাখাতে যেয়ে, আমি আমার শরীরে আজ বন্দী”
পুরুষ হবে শিকারি, রক্ত ঝরাবে, দুর্ধর্ষ যোদ্ধা হবে পুরুষ। পুরুষের অহং বোধ থাকবে টনটনে, কাউকে পরোয়া করবে না আবার কোন এক নারীর জন্য হাহাকার করবে, তার কাছেই নতি স্বীকার করবে... এসবই পুরুষতন্ত্র অঙ্কিত পুরুষের সমাগ্রিক চিত্র, এর থেকে বের হবার কোন উপায় নেই, এই ছকেই বাধা থাকবে পুরুষের জীবন। তাই কবি কয়েকটি উক্তি দিয়ে খুব চমৎকার ভাবেই ‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায়” পুরুষের ভালনারিবিলিটির চিত্র একেছেন এবং তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিক ধারনার বাইবে গিয়ে পুরো তাত্ত্বিক ধারনার ব্যাখা দিয়েছেন।
“আমি যে পুরুষ,আমার শিকারী হবার কথা ছিলো; কথা ছিলো পূর্ণিমার নীলে দুধর্ষ শরীরে রক্তাক্ত হবার”!
“আমি ভালোবাসতে ভুলে গেছি;ভুলে গেছি কি করে কাউকে কাছে টানতে হয়, নিজের অহং এর কাছে-আমি বিনয়ী হতে ভুলে গেছি”
কবির জন্য রইলো অনেক শুভেচ্ছা, চমৎকার একটি কবিতা উপহার দেবার জন্য পাঠকের পক্ষ থেকে অভিনন্দন।