আলোচনা ৬৭
প্রকৃতি অখণ্ড, সেখানে নেই কোন ভেদাভেদ
নেই প্রবেশ নিষেধ;
কেবল মানব প্রজন্ম তৈরি করেছে নানা জাল
আদেশ নিষেধ ।
মানুষের তৈরি নিয়মে মানুষকে নানা নামে অবিহিত হতে হয়, অনুপ্রবেশকারী, উদ্বাস্তু, রোহিঙ্গা, শরণার্থী আরও কত নামে!! রাজনৈতিক কারণে মানুষের পরিচয় পাল্টে যায়, মানুষ হয়ে যায় অপরাধী, ভূলুণ্ঠিত হয় মানবতা, ভিখেরি সাজে মানুষ হাত পাতে মানুষেরই কাছে। যদি এমন হতো, প্রকৃতির সীমানা নির্ধারিত থাকতো, এক দেশের বৃষ্টি অন্যদেশে হবে না, সূর্যের কিংবা চাদের আলো, বাতাস কোন কিছুই দেশের সীমানা ছাড়িয়ে যাবে না, তাহলে কেমন হতো পৃথিবীর চেহারা, কোথায় থাকতো ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হম্বি তম্বী?
কবি সমীর প্রামাণিক (অম্বরীষ কবি) এরকম এক প্রেক্ষিতকে বিবেচনা করে রচনা করেছেন তার কাব্য “প্রবেশ নিষেধ”, বলতে চেয়েছেন প্রকৃতি অকৃপণ ভাবে, ধনী গবীর, জাত-পাত নির্বিশেষে বিলিয়ে যাচ্ছে তার সম্পদ (আলো বাতাস, তাপ) কিন্ত মানুষ প্রকৃতির সম্পদ ব্যবহার করে, প্রকৃতির উপর নিষ্ঠুর আক্রমণ করেই নিজের আধিপত্য বিস্তার করছে আবার ক্ষমতার বিন্যাসে একজন অপরজনের উপর, এক দেশ অপর দেশের উপর নানাবিধ বিধি নিষেধ জারী করছে। মানুষকে তার গতিবিধির সীমানা বেধে দিচ্ছে, অন্যথায় নানাবিধ নামকরণে (অনুপ্রবেশকারী, উদ্বাস্তু, রোহিঙ্গা, শরণার্থী) আখ্যায়িত করে নিষ্পেষিত করছে।
কবি চমৎকার ভাবে বর্ণনা করেছেন “কাঁটাতারের কাঁটায় ভাগের যন্ত্রণা সয়ে সয়ে পৃথিবীর নরম শরীর ভাগ হয়েছে শত শত খণ্ডে খণ্ডে...” কিন্তু আমারা এমনটা চাইনি, আমারা চাই, অখণ্ড পৃথিবী বাসযোগ্য হউক সবার জন্য, প্রকৃতির মতই হউক মানুষের অবাধ বিচরণ, মানুষ প্রকৃতির সৃষ্টি, প্রকৃতিতেই তার বসবাস কিন্তু “এত বড়ো পৃথিবীর বুকে, একটুকরো মাথা গোঁজার ঠাঁই! খুব কি বেশি!” তবে মানুষ কেন আখ্যায়িত হয় “শুধু অনুপ্রবেশকারী!”
অসাধারণ এক মানবতাবোধের আবেদন নিয়ে ‘প্রবেশ নিষেধ” কাব্য রচনার জন্য কবিকে অভিবাদন ।