আলোচনা ৫০
[৫০তম কবিতার আলোচনা, আরেকটি মাইলস্টোন ছুঁয়ে দিলাম। প্রথম কবিতার আলোচনা প্রকাশ করেছিলাম নভেম্বর এর ৫, ২০১৭ তারিখে, খুব ভয়ে ভয়ে তা প্রকাশ করেছিলাম। দেখতে দেখতে অনেকগুলো কবিতার উপর আলোচনা হয়ে গেল, আজ প্রকাশ করছি ৫০তম কবিতার উপর আলোচনা। মাইলস্টোন স্পর্শ করলাম জনপ্রিয় কবি যাদব চৌধুরী এর “ কবি ও কবিতা” দিয়ে। শুরু করেছিলাম কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল এর ‘দহনের সুখ’ দিয়ে।]
কবি ও কবিতার মধ্যকার সম্পর্ক খুব গভীর যা কোন জাগতিক কিংবা বস্তুগত মুল্য দিয়ে মাপা যায় না। কবি কবিতা লেখেন মনের তাগিদে, পরিবর্তনের তাগিদে, নিজের কোন লাভ/ লোকসান বিবেচনা না রেখেই। জগতের সবাই যখন ব্যস্ত নিজের জীবিকার জন্য, নিজের লাভের জন্য, তখন একজন কবি নিজের কোন স্বার্থ বিবেচনায় না রেখেই কবিতা লিখে চলেন। তাই কবি যাদব চৌধুরী তার কবিতা ‘ কবি ও কবিতা’ শুরু করেছেন এভাবে- “জীবিকা সন্ধানে ব্যস্ত মানুষ, উদয়াস্ত পরিশ্রম করে চলেন, আর কবি থাকেন একজন, চাল নেই চুলো নেই, পাতার পর পাতা লিখে যান”।
একজন কবি কি খুব হিসেব করে কবিতা লিখেন? তার মনে কি প্রশ্ন থাকে, তিনি কি লিখছেন, কেন লিখছেন, কার জন্য লিখছেন, কার লাভ হচ্ছে কিংবা আদৌ কোন লাভ হচ্ছে কিনা ইত্যাদি? কবি কবিতা লেখার আগে এত সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে তারপর কবিতা লিখা শুরু করেন না। অনেকে যা দেখেন না বা দেখতে পান না, একজন কবি তাই দেখতে পান। একজন কবি জগতকে দেখেন, তার মন, চোখ ও হৃদয়ের সম্মিলনে এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যা সকলের চেয়ে আলাদা। তাই কবি বলেন-
“কি লেখেন? কেন লেখেন? কি পান ছাইপাশ লিখে? জগতের কি কল্যাণ হয় তাতে? না লিখে পারেন না কবি। তাঁর চোখ এমন কিছু দেখে, যা নজর এড়িয়ে যায় অনেকের। তিনি শোনেন আপাত না শোনা শব্দ। তাঁর হৃদয়ে জাগে এমন অনুভব, যুগযন্ত্রনায়, জীবনযুদ্ধের তাড়নায়, যা হারিয়ে গেছে, মরে গেছে অন্য হৃদয়ে। কবি তাঁর লেখার মধ্যে তা চালনা করেন”।
একজন কবি, সত্য ও সুন্দরের পক্ষে লিখেন, মানুষের জীবনের কথা লিখেন, আলোকিত পথের সন্ধানের জন্য লিখেন। কবি কখনোই কিছু পাবার প্রত্যাশায় লিখেন না, কোন লোভে পরে কিছু লিখেন না, কখনো কখনো উপহাস জোটে কিন্তু তারপরও লিখেন, মনের তাগিদে লিখেন, জগতের প্রয়োজনে লিখেন, কোন ব্যক্তি স্বার্থের বিবেচনার ওপরে উঠে লিখেন। তাই কবি শেষ লাইন লিখেছেন- “কিছু পাবার নিশ্চিত আশা নেই, হয়তো উপহাস জোটে কখনো, তবু মনের তাগিদ ও আনন্দে, কবি কবিতা লিখে চলেন”।
কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।