আলোচনা ০৮
জীবনচক্রের নানারূপ খুব স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া, সে প্রক্রিয়ার ব্যাত্যয় ঘটলেই তা অস্বাভাবিক হয়ে উঠে। শৈশব ও কৈশোরের দুরন্তপনা, যুব বয়সের খেয়ালি আচরণ আর প্রেমের উৎফুল্লতা, যৌবনের দুরন্ত ছুটে চলা যেমন স্বাভাবিক জীবনের ইঙ্গিত দেয় তেমনি মধ্যবয়সে কিংবা পরন্ত বয়সের ‘নস্টালজিয়া’ও একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রকৃতি ফেলে আসা জীবনকে আরেকবার উপভোগের সুযোগ দেয় নস্টালজিয়ার মাধ্যমে, এক জীবনকে দুবার উপভোগের সুযোগ। নস্তালজিয়ায় রচিত হয় উপন্যাস, গল্প কিংবা কবিতা, ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে আবার পূর্বেকার সময়ের সাথে বর্তমানের তুলনামূলক প্রেক্ষাপট তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আলোচ্য কবিতায় ‘নস্টালজিয়া’ একটি পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
কবি খলিলুর রহমান তেমনি এক কাব্য ‘ পিছনে ফিরে চাওয়া’ উপহার দিয়েছেন আমাদের । Flash Back এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন তৎকালীন সময়ের খণ্ড চিত্র । যদিও নস্টালজিয়ার উপর অনেক সময় নিয়ন্ত্রন থাকে না, হঠাৎ করেই ঘটনা ঘটে কিন্তু কবি ইচ্ছে করেই, সময় নিয়েই, নিজের নিয়ন্ত্রন রেখেই ‘নস্তালজিয়া’ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, পেছনে ফিরতে চেয়েছেন, ‘আজিকে শুধু বসিয়া রবো, চাহিব পিছু ফিরে, যত না কিছু এসেছি ফেলে, ভৈরব নদী তীরে”। বর্তমান সময়ের অনেকের কাছে তার মূল্য না থাকতে পারে কিন্তু ফেলে আসা সময়ের যিনি সাক্ষী তার কাছে তার মূল্য অনেক, সেকারনে বলা “কে বলে আর সেখানে, তার নেই আজ কিছু নেই ......সব আছে মনেতেই”
মানব জীবনের সম্প্রীতি, বন্ধন, পারস্পরিক সহযোগিতা, একে অপরের সাহচর্য এসবই মানব প্রজন্মের অহংকার, প্রজন্মে থেকে প্রজন্মান্তরে তা প্রবাহমান। কবি রূপক অর্থে নদীর এপার ওপার চিত্রে গোত্র, বর্ণ, জাত-পাত, ধর্ম নির্বিশেষে মানবিক মেল বন্ধন এর নির্দেশনা দিয়েছেন, নস্তালজিয়া পদ্ধতির মাধ্যমে ( এপারে যখন ম’জিদে আজান ওপারে শঙ্খধ্বনি, দুই পারে চলে যুগ থেকে যুগে জীবনের বন্ধনি)
এপারের গাভী হারিয়ে বাছুর
হাম্বা স্বরে যেই ডাকে
ওপারে বাছুর তারে মা ভেবেই
হতবাক চেয়ে থাকে।
এপারের গাঁয়ে কত কী ঘটে
ওপারে তারই যে ছায়া
এপারে দুঃখে কাঁদিলে জীবন
ওপারে কাঁদে যে মায়া।
একের বিপদে অন্যের সহযোগিতা , একের কষ্টে অন্যের অনভুব, একের ছায়ায় অন্যের বসবাস......এসবই মানবতার অহংকার, গৌরব কিন্তু আজ আমরা তা হারাতে বসেছি, তাই নস্তালজিয়া প্রক্রিয়ায় বলতে চেয়েছেন এসবের অস্তিত্ব ছিল বলেই তা থাকবে, থাকতে হবে। মানবতার এ বন্ধনকে ‘উইটপিয়া’ ভাবার কোন কারন নেই।
কবি বেশ কিছু উদাহরন দিয়েছেন একে ওপরকে কতটা অনুভবে, অনুভুতিতে রাখা প্রয়োজন (এপারেতে যেই চৈতের দুপুরে, ছেলে দেয় জলে ঝাঁপ, ওপারের মেয়ে দেখে চেয়ে চেয়ে ,দেহ মনে বাড়ে তাপ), একের ঘটনা অন্যকে কতটা পীড়া দেয়া দরকার (এপারে যখন সূর্যটা ডোবে, ওপারের লোকে দেখে, ওপারের বর এপারের বধূ, জীবন কাহিনী লেখে)
কবির ভাবনাকে ছুঁতে পারলাম কিনা জানি না। কবির জন্য থাকলো একরাশ শুভেচ্ছা।