আলোচনা ৭৮
বলা হয় পৃথিবীর ভর কেন্দ্র নাকি ‘ক্ষুধা’ ক্ষুধাকে কেন্দ্র করেই পৃথিবী ঘুরছে, ক্ষুধাকে কেন্দ্র করেই ভাল-মন্দ উভয় ধরনের কাজের সমারোহ। আবার কবি বলেন ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়” কিংবা ‘পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’, এভাবেই যুগে যুগে নানাজন নানাভাবে ‘ক্ষুধা’র অনুভুতিকে প্রকাশ করেতে চেয়েছেন। কবি নূর ইমাম শেখ বাবু তার ‘পেটের দায়’ কাব্যে একই অনুভুতি ভিন্নভাবে বলার চেষ্টা করেছেন।
কবি বলেন, পেট শান্ত হলে দুনিয়া শান্ত, পেটের জ্বালায় দুনিয়া অশান্ত হয়ে উঠে। পেটের দায় দূর করার জন্যই মানুষের নিরন্তর ছুটে চলা, দেশে বিদেশে অনিশ্চিত গন্তব্যে ঘোরা ফেরা। পেটের জন্যই অর্থাৎ ক্ষুধার জন্য দ্বন্দ্ব, সহিংসতা, অন্যায় অত্যাচার এবং হাহাকার। পেটের দায়কে কেন্দ্র করেই, মানুষ ভিক্ষে করে, দু হাত পেতে মানুষের কাছে আবার অন্যদিকে লুট করে সম্পদ, ব্যাংক জালিয়াতি চলে নানা কৌশলে। একে অপরকে ল্যাং মারে, মিষ্টি কথা দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে সৃষ্টি করে বর্বরতা।
মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, ক্ষুধা নিবারনের জন্য হয়তো কিছুটা অপকর্ম করে, হয়ত কোন কোন সময় কিছু অন্যায় করে বটে কিন্তু সব কিছুকেই কি আমার পেটের দায়’র এর কাঠামো দিয়ে ব্যাখা করতে পারবো নাকি সেটা ঠিক হবে? কবি বলেছেন, ‘পেটের দায়ে মন্ত্রী হওয়া’ কিংবা ‘পেটের দায়ে লকার খালি করা”, আসলেই কি পেটের দায়ে?? যে অর্থে আমরা ‘পেটের দায়’ শব্দটি ব্যবহার করি, সেই একই অর্থে মন্ত্রি হওয়ার বাসনাকে পেটের দায় বলবো? পাঠকের মনে নিশ্চই প্রশ্ন থেকেই যায়।
পেটের দায়ে রক্ত বিক্রি হয়, সন্তান বিক্রি হয়, দেহ বিক্রি হয় এসবই রুঢ় বাস্তবতা কিন্তু মনুষ্যত্ব বিক্রি করাকে কি আমারা ‘পেটের দায়’ বলতে পারি?? পৃথিবীতে যত অপকর্ম হয় সব কিছুকেই কি আমারা ‘পেটের দায়’ বলে দায়মুক্তি দিতে পারি? ব্যাংক জালিয়াতি, ব্যাংক ডাকাতি কি পেটের দায়ে নিরন্ন মানুষ করতে পারে নাকি তার সে সুযোগ থাকে? আমার ব্যক্তিগত অভিমত, পেটের দায়ে সব কিছুকে হালাল করে দেয়া, পেটের দায়ে শ্রম শোষণ করা, পেটের দায়ে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করা...... খুব ভুল হবে, এমনকি মানবতার সাথে মহা অন্যায় করা হবে। বিচার করার ভার পাঠকের কাছে থাকলো।
কবির জন্য রইলো অভিনন্দন, খুব সুন্দর একটি বিষয় নির্বাচন করার জন্য।