আলোচনা ১৭১
সুখ কিংবা দুঃখ, কিসের উপর নির্ভর করে, তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষনা। ধর্ম তার উপসংহার টেনে দিয়েছেন। ভোগের মধ্যে কোন সুখ নেই, ত্যাগের নানা মহিমার কথা বলা হয়েছে। আত্মতৃপ্তি আসে যতটুকু পাওয়া হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট থাকা, সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্রমাগত শোকরিয়া করা, সন্তুষ্টি জানান দেয়ার মধ্যেই সুখ। ধর্মের নানান বানীতে মূলত এভাবেই ব্যাখা এসেছে। অন্যের সাথে তুলনা করার প্রতিও চরম নিষেষাজ্ঞা জারী আছে বিশেষ করে উপরের কারো সাথে (যিনি ইহজগতে অনেক কিছু পেয়েছেন বা অর্জন করেছেন), তুলনা যদি করতেই হয় তবে নীচের জনের সাথে (যিনি আপনার থেকেও নীচে অবস্থান করছেন)। ধর্ম এভাবেই সুখের ঠিকানা দিয়েছেন, সুখের সন্ধান দিয়েছেন।
মোটিভেশনাল স্পীকেরদের বক্তব্য, অন্যের সাথে সারাক্ষন তুলনা করলে আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন, তুলনা হবে সব সময় দুভাবে
১। গতকালকের আপনার সাথে আজকের আপনার সাথে অর্থাৎ নিজের সাথেই নিজের তুলনা করে অগ্রগতি মাপা
২। সময়ের সাথে তুলনা অর্থাৎ সময়ের ব্যবধানে আপনি এগোচ্ছেন কি না (যদিও এগোনা কিংবা পেছানো পুরো ব্যাপারটাই আপেক্ষিক)
একটি মাত্র শব্দ দিয়ে কবিতার শিরোনাম, খুব একটা দেখা যায় না। কবি মোঃ আনোয়ার সাতাদ পাটোয়ারী, খুব দক্ষতার সাথে একটি মাত্র শব্দ এবং শব্দের অপচায় না করে দারুন এক কাব্য রচনা করেছেন যা বিশ্লেষন করলে ২-৩ পৃষ্টার একটা প্রবন্ধ লেখা যাবে।
সুখ এবং দুঃখের বিচারের মানদন্ড অর্থাৎ সূচক কি হবে, সেটা একটা মূল প্রশ্ন। পুজিবাদী সমাজ এবং রাষ্ট কাঠামোতে, ভোগবাদী উপকরন দিয়ে মাপা হয় সুখের পরিসীমা। যে কোন দেশের উন্নতি মাপার মাপকাঠি হলো, জিডিপি (Gross Domestic Product), জিএনপি (Gross National Product)। ফলে যে যতো বেশি অর্থ বিত্তের, সম্পদের মালিক হবে সে ততোটাই সুখী হবে এমনটাই শেখানো হয় পুজিবাদী শিক্ষায়, লিটারেচারে, ছোটবেলা থেকেই এ ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে, এর বাইরে আর কিছু ভাবতে পারে না মানুষ, ফলে নিরন্তর ছুটে চলে অর্থ, বিত্ত, সম্পদ, গাড়ি, বাড়ীর দিকে, সেখানেই সুখের সন্ধান করে বেড়ায়।
ভুটান একমাত্র দেশ যারা, দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি ভিন্নভাবে নির্ধারন করেছে, তারা বলে জিএনএস (Gross National Happiness), যে কারনে তারা সুখ মাপার ভিন্ন মাপকাঠি নির্ধারন করেছে এবং তথাকথিত অর্থনীতির মারপ্যাচ দিয়ে জীবনের সুখ অন্বেষণ করে না।
আলোচ্য কবিতার মূল বক্তব্য সেটাই, সুখ এবং দুঃখ পরিমাপের সূচক কি হবে। কবিও এখানে একটা নিজস্ব অবস্থান দাঁড় করিয়েছেন, তথাকথিত ভোগ বিলাসের মধ্যে সুখ খুঁজে পাননি, তিনি তার বন্ধুর সাথে তুলনামূলক প্রেক্ষাপটে বলতে চেয়েছেন, তার পাঁচতলা প্রাসাদ, দামি মার্সিডিজ গাড়ি, তারপরও সে সুখে নেই কিন্তু নিজের কিছুই নেই, কুড়েরঘর, নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তারপর ও তার মনে সুখ আছে।
আসলে সুখ এবং দুঃখ দুটোই খুব আপেক্ষিক ব্যাপার, যে যেভাবে ভাবে, ভাবতে চায় বা অন্যরা (সমাজ, পরিবার, পারিপার্শিকতা ইত্যাদি) তাকে ভাবাতে শেখায়, সে সেভাবেই সুখকে দেখতে চায়। অন্যদের সাথে সেটা নাও মিলতে পারে।
দিন শেষে, এটা বলা খুবই মুশকিল, কে কিভাবে সুখী হলো বা কে কিভাবে, কি কারনে দুঃখী হলো, তা বিচারের জন্য নিজের সাথে নিজের কথা বা নিজের ভাবনাই উত্তম সূচক।
অল্প কথায় বেশ জ্ঞান গম্ভীর একটি থীম নিয়ে কাব্য রচনা, কবির প্রতি রইলো অফুরান শুভেচ্ছা