আলোচনা ১৯০
গল্প বলার ভঙ্গীতে দারুন একটি দ্বন্দ্ব তুলে ধরেছেন কবি মোঃ সোলায়মান মিয়া তার কাব্যের শিরোনাম “পাপ-পুণ্য”তে। মানব চরিত্রের এক চিরাচরিত রূপ, এক মুখোশ, এক দ্বন্দ্বমুখর চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন।
সত্য-মিথ্যা, সৎ-অসৎ, ভালো-মন্দ...বিপরীতমুখী এই শব্দগুলো অল্পজ্ঞান সম্পন্ন মানুষকে ধাঁধায় ফেলে দেয়, মানুষ নানা ধরনের যুক্তি তর্কের ধাঁধায় পরে নিজের বিচারবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে, নিজের গতিপথ বা অবস্থান ঠিক করতে পারে না ফলে ঘোরপ্যাচের মধ্যেই জীবন অতিবাহিত করে।
আবার অন্যদিকে, অতিবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে রেখে নিজেদের সুবিধে আদায় করে নেয়। কেউ কেউ শব্দগুলোকে আপেক্ষিত শব্দ বলে অবিহিত করে থাকেন, কেউ বা একে প্রেক্ষিত বিবেচনাধীন বলেও অভিহিত করে থাকেন। কিভাবে ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, সৎ-অসৎ ইত্যাদি বিচার করা হবে, এর সঠিক সূচক কি হবে, পৃথিবীব্যাপি সবাই একইরকম সূচকে একমত নাও হতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবেই বিভ্রান্তির বীজ বপন করা হয় ব্যক্তির চিন্তায় এবং সমাজে।
যে কোন ধর্ম চর্চাকারীদের কাছে সত্য-মিথ্যা, সৎ-অসৎ, ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য এর স্পষ্ট সূচক আছে, আছে সঠিক গাইডলাইন এবং বিচার করার সুস্পষ্ট মাপুনী। ফলে তারা পাপ-পুণ্যের মাপুনী বা সূচক নিয়ে দ্বিধান্বিত থাকে না বরং কিভাবে পাপ এড়িয়ে পুণ্যের দিকে অধিক অগ্রসর হতে পারে সেদিকে অধিক মনোযোগী হয়ে থাকে। কিন্তু মানুষের তৈরী যে কোন মতাবাদ (পুজিবাদ, নারীবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ...) এযাবতকাল পর্যন্ত এসব শব্দের সঠিক কোন সূচক/মাপুনি দিতে পারেনি। আপেক্ষিকতার মোড়কে, মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে রেখে নিজেদের লভ্যাংশ ভোগ করেছে নিজ নিজ জায়গায় বসে থেকে।
কবি “গোবর” এবং “পদ্মফুল” রূপকের মাধ্যেম, তথাকথিত প্রগতিশীলতার নামে নানা ধরনের বিভ্রান্তির জাল কিভাবে বিস্তার লাভ করে তা খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। যেমন-
একটি ফুল ফুটিল
কেহ কেহ বলিল - ইহা একটি কাগজের ফুল
কেহ কেহ বলিল - ইহা একটি ছত্রাক
কেহ কেহ বলিল - বৃষ্টির পানি লাগিলেই মরিয়া যাইবে
কেহ কেহ বলিল - কিছু সময় পরেই ধ্বসিয়া যাইবে
ফুলের একটি নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আছে, এর ঘ্রান আছে, এর সুন্দর একটি কাঠামো আছে, আকর্ষন করার ক্ষমতা আছে ইত্যাদি কিন্তু মানুষ একে নানাভাবে বিতর্কিত করে, এর আসল বৈশিষ্ট্য থেকে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করে একেই বিতর্কিত করে তুললো।
কিছু মানুষ তাদের নিজেদের সার্থ রক্ষায়, ভালো বিষয়কে অশ্লীল, কদর্য, বীভৎস রূপে উপস্থাপন করে মানুষকে বিভ্রান্তির জালে আটকে রাখে। কবি শেষে দেখিয়েছেন তার সর্বশেষ রূপ “ উজ্জলতায় পাপ, মলিনতাতেই পুণ্য”।
গোবরস্তানের সর্দার বলিল -
ফুলটি দেখিতে আমার চাইতেও উজ্জ্বল
আমার চাইতে উজ্জ্বল কেহ এইখানে থাকিতে পারিবে না
সবাইকে থাকিতে হইবে মলিন হইয়া
কারণ - "উজ্জ্বলতায় পাপ, মলিনতাতেই পুণ্য"
কবি’র জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা