আলোচনা ২১৭
পুরো কবিতাটি পড়ার পর, কয়েকটি শব্দের উপর চোখ আটকে থাকলো বেশ কিছুক্ষন। ভাবছিলাম, মাত্র অল্প কিছু শব্দ কিভাবে একটা পুরো ভাবনাকে ধারন করতে পারে। কবিতায় শব্দের খেলা বলে একটা কথা আছে। কেউ কেউ কবিতাকে ‘শব্দ শিল্প” বলে এবং কবি’কে বলে থাকেন “শব্দ কামার” অর্থাৎ শব্দের উপর আধিপত্য থাকে, শব্দকে পিটিয়ে কামারের মতোই নিজের মতো করে ব্যবহার করেন।
একটা শব্দ নিজেই একটা অর্থ ছুড়ে দেয়, স্বতন্ত্রভাবে শব্দের নিজের একটা অর্থ থাকে, নিজের একটা রূপ থাকে আবার একটা শব্দ অন্য আরেকটি শব্দের গায়ের সাথে জুড়ে দিলে তার ব্যঞ্জনা ভিন্ন হয়, গভীরতার তল স্পর্শ করা যায়। শব্দগুলো একে অপরকে জড়িয়ে ভাবনার মাত্রাকে পূর্নতা দেয়। কবিতাটি পড়তে পড়তে এসবই ভাবছিলাম। যেমন-
অল্পকিছু শব্দঃ নিরলস, হঠাৎ, বিশ্বস্ত, যত্ন, সরিয়ে, ঠিক, মনে, বোবা, হৃদয়, নিংড়ানো, নিখাদ, স্পর্শ
শব্দের গাঁয়ে শব্দ জড়ানোঃ
•শুধু “নিরলস” শব্দের একটা অর্থ আছে কিন্তু যখন বলি “নিরলস বয়”, তখন তার মাত্রা পরিবর্তন হয়, তখন তার গভীরতা অনুভবে আসে। দুর্দমনীয় শক্তির বাতাসকে তখন শ্লথ গতির একটা সত্ত্বা মনে হয়।
•বৃষ্টি শুকনো মাটি ভিজিয়ে দিয়ে যায়, এর সাথে যখন ‘হঠাৎ” শব্দটি যোগ হয়, তখন অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা ঘটতে চলছে, আচমকা কিছু পেয়ে গেলে যেমন উৎফুল্ল হয়, তেমন একটা অনুভুতির জন্ম হয়।
•বিশ্বস্ত শব্দটি যখন “হাতের অপেক্ষায়’র” পুর্বে বসলো তখন তার ভিন্ন এক ব্যাঞ্জনা ধরা দিলো। শুধু “হাতের অপেক্ষায়” বললে সেই ব্যাঞ্জনা খুজে পাওয়া যাবে না।
•নিখাদ শব্দটি ভালোবাসাকে গুনগতভাবে কোয়ালিফাই করে, “অনেক ভালোবাসা” বললে একটা পরিমানগত ভাবনা কাজ করে যদিও অনেক শব্দটি গুনগত কিন্তু “নিখাদ” শব্দটি, “ভালোবাসার গভীরতা”, “ভালোবাসার স্পষ্টতা”, “ভালোবাসার নিশ্চয়তা”কে ইঙ্গিত করে।
এভাবেই উপরে বর্নিত শব্দগুলো পাঠককে ভাবিয়ে তোলে এবং কবিতার ভেতরে প্রবেশ করার প্রথম শর্তপুরন সাপেক্ষে অনুমতি প্রদান করে। শুধুমাত্র কবি’র ভাবনাকে ছাড়িয়ে, পাঠকের নিজের ভাবনাকেও জড়িয়ে রাখার নিঃশর্ত অনুমতি দিয়ে থাকে্ন কবি।
পুরো কবিতাটিকে পাঠক একটি গাছের আত্মজীবনী হিসেবে ভাবতে পারে, যেখানে একটি গাছের সাথে মানুষের মানবিক সম্পর্ক, গাছের অসহায়ত্ত কিংবা গাছের টিকে থাকার সাথে মানুষের এবং প্রকৃতির নানারূপ আচরনের একটি স্থির চিত্রায়ন হতে পারে।
আবার পুরো কবিতাটিতে, পাঠক গাছের টিকে থাকার ব্যাপারটিকে উপমা হিসেবে নিয়ে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক, মানুষের ভালোবাসার ছায়া এবং প্রত্যাশা, মানুষ কিভাবে মানবিক হয়ে উঠতে পারে...ইত্যাদি বিষয়ের একটি গতিধারা পেতে পারেন। মানুষের জীবনেও নানা ঝড় ঝঞ্জা আসে, মানুষও নানাভাবে সমস্যা জর্জরিত হয়, মানুষই প্রাকৃতিক কিংবা মনুষ্য সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলা করে। কিন্তু মানুষের ভালোবাসাতে, মানুষের স্পর্শে, মানুষের মানবিক আচরনেই মানুষ আবার নিজেকে মেলে ধরতে পারে, নিজের অসহায়ত্ব ঘোচাতে পারে।
খুব অল্প কথায় দারুন এক কাব্য উপহার দেয়ার জন্য, শুভেচ্ছা রইলো।