আলোচনা ৫৫
গত সপ্তাহের নির্বাচিত কবিতাগুলোর মধ্যে দুটো কবিতা বেশ ভাল লেগেছে। তার মধ্যে আজ আলোচনা করছি একটি, আগামিকাল অপরটি করব। কবিতাটি বক্তব্য উপস্থাপনে ভিন্নতা আছে। জেন্ডার বিষয়ে প্রায় সময়ই প্রশিক্ষণ ফ্যাসিলিটেট করতে হয়। ভিন্ন কোন উদাহরণ সব সময় খুঁজে পাওয়া যায় না সব সময়। কবিতাটি প্রশিক্ষণে আলোচনার বিষয় হতে পারে।
এক কন্যা ভ্রূণের আর্তনাদ প্রকাশিত হয়েছে কবিতায়। নারীর প্রতি বৈষম্যের আলোচনা শুরু হয় সাধারণত জন্মের পর থেকে কিন্তু আলোচনা করা দরকার জন্মের আগে থেকে এবং মৃত্যুর পর পর্যন্ত। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কন্যা ভ্রূণকেও ছাড় দিতে নারাজ। কন্যা ভ্রূণের সাথে তার মায়ের এক কাল্পনিক কথোপকথন, অসাধারণ এক উপ্সথাপনা কবি মৌটুসি মিত্র গুহ (কেতকি) এর অনুরোধ কাব্য।
কন্যা ভ্রূণ পৃথিবীর আলো দেখবার আগেই কেমন করে জেনে যায়, পৃথিবীতে আসার পর তার সাথে কেমন আচরণ করা হবে, কতটা বৈষম্যের শিকার হবে সে, পুরো পৃথিবী তার আগমনকে স্বাগত জানায় না যেমনটা জানায় এক ছেলে ভ্রুণকে, কি ভয়ংকর বাস্তবতা কন্যা ভ্রূণ আগেই টের পায় তার মায়ের অস্তিত্তের সাথে মিশে গিয়ে। সে নিশিচিতভাবেই জানে, কেউই তাকে সাদরে গ্রহন করবে না কিন্তু প্রত্যাশা করে অন্তত তার মা তাকে আদরে গ্রহণ করবে কিন্তু সে বুঝতে পারে না, তার মা কতটা নিষ্পেষিত এই সমাজে, কেবল নারী বলেই তার কোন সম্মান নেই, তার কোন মর্যাদা নেই, তার কোন মতামত নেই। সে শুধু জন্ম দিবে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যা চায় তাই তাকে করতে হবে। ছেলে সন্তান হলে ১০ মাস গর্ভে ধারণ করবে কিন্তু মেয়ে সন্তান হলে গর্ভপাত ঘটাবে, কি বীভৎস এই সমাজ ব্যবস্থা। সেটাই কবি লিখেছেন-
“যেদিন জানলাম ওরা কেউ চায় না আমায়, অবাক হই নি! কিন্তু,যখন জানলাম তুইও, বিশ্বাস হয় নি মা!শুনেছি, পৃথিবীটা নাকি অপার সৌন্দর্যের ভান্ডার, আমারও যে সাধ বড়ো, নয়ন মেলে প্রাণ ভরে দেখব, আলোয় মোড়া সাধের জগতটাকে, চেটেপুটে চেখে নেব জীবনের স্বাদটুকু! আমিও যে ব্যথা পাই মা নীরব কান্নায় ভাসি আমিও...! আমার ছোট্ট হৃদয়ও যে স্পন্দিত হয় প্রাণস্পন্দনে, তোর সমস্ত অনুভূতি যে আমারও! এসব তো তোর অজানা নয়, তবে কেন......!
কতটা কষ্ট নিয়ে কবি এক কন্যা ভ্রূণের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, তথাকথিত সমাজ সভ্যতার নির্মমতা, কতটা বীভৎস অবস্থার স্বীকার হলে এক কন্যা শিশু, ভ্রূণ থাকা কালেই আস্থা হারিয়ে ফেলে সমাজ পতিদের প্রতি, কতটা হাহাকার বুকে নিয়ে কবি কন্যা ভ্রূণের মুখ দিয়ে শেষ কথা বলিয়েছেন তার মাকে-কবির শব্দচয়ন দিয়ে আমাদের বোঝা উচিত, তাই আলোচকের শব্দভাণ্ডার বাদ দিয়ে কবির শব্দ দিয়েই পাঠকে বঝাতে চাই।
“ওদের বলে লাভ নেই জানি, তাই তোকেই বলি মা -অনুভবের শেষ সীমায় দাঁড়িয়ে আর একটিবার আমার ছুঁয়ে দেখ না মা...হয়তো বা অনুভবে আছি, আমি আর আমার ব্যথা! না,কোনো দয়া বা করুণা নয়, যদি গহীন অন্তরের ভালোবাসা দিয়ে গ্রহণ করতে পারিস আমায়,
ভেবে দেখিস আরো একবার......!
অসাধারণ এক কবিতার জন্য কবির জন্য রইলো লাল সালাম।