আলোচনা ১৪৭
কবিতার বিষয়শ্রেনী হিসেবে লেখা হয়েছে, কবিতাটি জীবনবোধের, প্রেমের এবং বিরহের। একটা কবিতা তিনটি শ্রেনীবিন্যাসকে স্পর্শ করেছে, একটু আগ্রহ জন্মালো, ভেতরটা দেখার জন্য, তাছাড়া শিরোনাম “তুমিবিহীন অস্তিত্বহীন”। সাধারনত তুমিবিহীন এর পরে অন্য শব্দ দেখা যায় আবার অস্তিত্বহীন আর আগে ভিন্ন কোন শব্দ দেখা যায়। সে কারনে কবিতার শিরোনামও আগ্রহ তৈরি করেছিলো।
প্রেম, ভালোবাসা শব্দ দুটো নিয়ে নানা ধরনের গোলমেলে ভাবনা আছে, কেউ কেউ প্রতিশব্দ হিসেবে দেখে, বোদ্ধাগন নানাভাবে বিশ্লেষন করেন, চুলচেরা হিসেব করতে বলতে পারেন, শব্দদুটো আক্ষরিক অর্থে খুব বেশী ভিন্ন না হলেও প্রায়োগিকভাবে ভিন্নতা থাকে। আবার সাধারন মানুষের বোধগম্যতার স্তরে খুব বেশী পার্থক্য দেখা যায় না। সাহিত্যিকদের সাহিত্য ভাবনায় ভিন্নতা আছে, আবার কবিগন শব্দদুটোর সাথে নানা উপমা, রূপকতা জু্ড়ে দিয়ে অনেক ভাবনারস তৈরী করে থাকেন।
অন্যদিকে, সাধারনভাবে প্রেম বলতেই বুঝি, মানব মানবীর প্রেম, শারিরীক প্রেম, মনের মিলন ইত্যাদি, তাৎক্ষনিকভাবে অনেকেই ক্ষেপে গিয়ে বলবেন, প্রেম কেন শুরু শারিরীক হবে, এই ভাবনাটা ঠিক না, প্রেমের সাথে আত্মার সম্পর্ক আছে, মনের সম্পর্ক আছে, ফলে প্রেম, শরীর, আত্মা, মন ইত্যাদি নানা অনুষঙ্গের সমষ্টি।
কেউ বলবেন প্রেম কেন শুধু মানব কেন্দ্রিক হবে, প্রেম তো “প্রকৃতি প্রেম”, “আল্লাহ বা ঈশ্বর প্রেম” হতে পারে, বাবা মা এর প্রতি প্রেম, ভাই- বোনের প্রতিও প্রেম হতে পারে, প্রেম তো পশু প্রানীর প্রতিও হতে পারে, প্রেম হতে পারে ভালো লাগার কোন বস্তুর প্রতিও, তার মানে প্রেম বস্তুর সাথে অবস্তুর হতে পারে। কাজেই খুব বেশী তার্কিক বা সাহিত্যভাবনা বাদ দিলে, প্রেম বা ভালোবাসা শব্দদুটিকে খুব সাধারনভাবে মানব-মানবীর মাঝের প্রেমকে বুঝে থাকি আমি, আপনি, সবাই। একইভাবে সেই প্রেমকে কেন্দ্র করেই “বিরহ”, “বেদনা”, ‘দহন” ইত্যাদি শব্দ এসে যায়।
এই কবিতাটির প্রথম অংশ পড়তে পড়তে পাঠক মনেও সেই চিরাচরিত ভাবনা “তুমি” মানে সবশেষে যে প্রেমের কথা বললাম তাকে ঘিরেই অনুভুতিগুলো আবর্তিত হতে থাকবে, আমারও তাই হয়েছিলো। কিন্ত এক ঝটকায় কবি, পুরো ভাবনার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন। অসাধারন টার্নিং, একেবারে ইউ টার্ন!!
এ প্রেম, সে প্রেম নয়
এখানে কবি, ভিন্ন এক প্রেমের কথা বলেছেন, কবিতা, সাহিত্য, কবি, লেখক এর প্রতি প্রেম এবং সেই প্রেম উদ্ভাসিত হয়, কবি লেখকদের সৃষ্টি নিয়ে যে মিলনমেলা তৈরী হয় অর্থাৎ “বইমেলা” তাকে ঘিরে প্রেম। লেখকরা যদি কোন কারনে লেখা বন্ধ করে দেয় তাহলে মিলনমেলাও থাকবে না, প্রেমও থাকবে না।
এবার যদি, উলটো থেকে, অর্থাৎ নীচ থেকে কবিতা পড়ে আসি, তাহলে প্রথম অংশ পড়ার পর যে ভাবনা আগে হয়েছিল, সেটা আর থাকবে না, মনে হবে, কবি আসলে প্রথম থেকেই মানব-মানবিকে বাদ দিয়ে সাহিত্য প্রেমের কথাই বলেছেন। সাহিত্য কিভাবে পথচলা তৈরি করে, আবেগ অনুভূতি, বাস্তবতা, প্রতিবাদের সংজ্ঞা তৈরিতে ভূমিকা রাখে। কিভাবে আঁধারকে ঢেকে দিয়ে জ্ঞান তার প্রদীপ দিয়ে আলোকিত করে রাখে, এসব। সে কারনে, এ প্রেম জীবনের সঙ্গী, সার্বক্ষনিক প্রেম।
কবিতার টার্নিং পয়েন্ট সহ, পুরো ভাবনাটাই দারুন হয়েছে, বেশ লাগেছে আমার।
কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।