আলোচনা ১৩৮
বর্তমান সময়ে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি শব্দের সাথে আমরা পরিচিত। সারা বিশ্বব্যাপী ধর্মভিত্তিক অরাজকতা আমরা দেখছি, ইসরাইল-ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, বাবরী মসজিদ দাঙ্গা ইত্যাদি ইস্যুতে দাঙ্গা-হ্যাঙ্গামা। ধর্ম এবং রাজনীতি এক অপরের সহায়ক ভুমিকা পালনকারী হিসেবে বিশ্বব্যাপী হানাহানি চলছেই।
আমার ধারনা মানুষ দুভাবে ধার্মিক হয়ে থাকে (যে কোন ধর্ম), একটি জন্মগতভাবে অর্থাৎ যে ধর্মীয় পরিবারে সে জন্মগ্রহন করেছে, সেই পরিবারের ধর্মবিশ্বাস, আচার এবং রীতি অনুযায়ী সে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে যাকে বলা যায় By Born X Religious minded এবং অন্যটি হলো, তার নিজের ইচ্ছেনুয়ায়ী, তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে যে ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে যাকে বলা যায় By Choice Y Religious minded। মূলত যে কোন ধর্ম সম্পর্কে অগাধ ধারনা, গভীরতা, জ্ঞান না থাকলে অর্থাৎ By Born X Religious minded হলে, শুধু কিছু আচার এবং ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের মাধ্যমে খুব বেশী ধর্মীয় দর্শনের গভীরে যেতে পারে না ফলে নানা ধরনের বাহ্যিক প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ওঠে কিন্তু যদি By Choice Y Religious minded হয়, তাহলে তার মধ্যে উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না (তুলনামূলকভাবে কম) অর্থাৎ বাহ্যিক নানা ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে নিজ নিজ ধর্মীয় দর্শন দ্বারা তার জীবন পরিচালিত করে থাকে (সব ক্ষেত্রেই কিছু ব্যতিক্রম আছে, আমি সাধারনভাবে এ কথাগুলো বলছি), সেক্ষেত্রে উগ্রতা বা ধর্মান্ধ আচরন থেকে মুক্ত থাকতে পারে। সেই সাথে, যে কোন ধর্মীয় উগ্রতা বা ধর্মান্ধতার সাথে যুক্ত হয় বিশ্বরাজনীতি, আঞ্চলিক রাজনীতি আবার কখনো কখনো স্থানীয় রাজনীতি, ফলে গোটা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে গোটা মানব সভ্যতার জন্য। আলোচ্য কবিতাটি সে রকম এক প্রেক্ষিত নিয়েই লেখা হয়েছে।
এখানে কবি বলতে চেয়েছেন, যে কোন ধর্মীয় বিশ্বাস আমাদের নিঃশ্বাসের সাথে মিশে থাকে তার সাথে দাঙ্গা হাঙ্গামার কোন সম্পর্ক নেই। সকল ধর্মই শান্তির বানী প্রচার কর, মানবতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। যার যার ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী মসজিদ কিংবা মন্দিরে উপাসনা করে। এখানে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, চার্চ এর কোন উগ্রবাদী ভূমিকা থাকে না, আমরা মানুষরাই ধর্মীয় দর্শনকে ভিন্ন ভাবে ব্যাখা করে উগ্রতা সৃষ্টি করে থাকি। সে কারনের শুরুতেই কবি লিখেছেন-
চুপি চুপি উড়ে আসছে একটি মুসলিম নিঃশ্বাস
প্রগাঢ় বাতাসের সঙ্গে মিশে নিঃশব্দে
হিন্দু পাড়ার ভেতর কি সাবলীল ভাবে এগিয়ে চলেছে!
ভয় করছে না? মন্দিরের ভেতর ঢুকে পড়েছে সে।
কি সর্বনাশ ! দাঙ্গা বাধবে এবার ....
পুরো কবিতাটিই ধর্মীয় উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ইত্যাদির বিপরীতে অবস্থান নিয়ে, ধর্মীয় মূল দর্শনের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। কবিতাটা পড়তে পড়তে, বেশ কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটি গল্প পড়েছিলাম যা এই কবিতার সাথে প্রাসঙ্গিক, তাই গল্পটিও আলোচনার সাথে জুড়ে দিলাম।
অল্প কথায় কবি একটি সময়োপযোগী কবিতা আমাদের উপহার দিয়েছেন। কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।
শকুনের বাচ্চার মানুষের মাংস খাওয়ার ইচ্ছে নিয়ে গল্পঃ
এক শকুনের বাচ্চা তার বাবার কাছে বায়না ধরলো, "বাবা, আমি মানুষের মাংস খাব”!
শকুন বললো, "ঠিক আছে বেটা, সন্ধ্যার সময় এনে দেবো। শকুন উড়ে গেল আর আসার সময় মুখে এক টুকরো শুকরের মাংস নিয়ে এসে বাসায় রাখলো। বাচ্চা বলল--"বাবা, এটা তো শুকরের মাংস, আমি তো মানুষের মাংস খেতে চেয়েছি।"
বাবা বললো --অপেক্ষা করো বেটা!
শকুনটা আবার উড়ে গেল আর আসার সময় মরা গরুর এক টুকরো মাংস নিয়ে এলো।
বাচ্চা বললো --"আরে এটা তো গরুর মাংস নিয়ে এসেছো, মানুষের মাংস কোথায়?
এবার শকুনটা দুটো টুকরো একসাথে মুখে নিয়ে উড়াল দিল আর শুকরের মাংসের টুকরো একটি মসজিদের পাশে আর গরুর মাংসের টু্করো একটি মন্দিরের পাশে ফেলে দিয়ে চলে এলো!
কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে শুরু হলো দাঙ্গা! কয়েকশ মানুষের লাশ পড়ে গেলো! তখন গাছের ডাল থেকে নেমে বাপ-বেটা মিলে খুব তৃপ্তিতে মানুষের মাংস খেলো।
বাচ্চাটা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করছে-- "বাবা, এত মানুষের মাংস এখানে কি করে এলো ?"
শকুন বললো-“এই মানুষ জাতটাই এরকম। সৃষ্টিকর্তা এদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ বানিয়ে জন্ম দিয়েছেন, কিন্তু ধর্ম আর রাজনীতির নামে এদেরকে আমাদের থেকেও হিংস্র বানানো যেতে পারে”!
বাচ্চা বললো তুমি ধর্মকে ব্যবহার করলে কেন? কতগুলো নীরিহ লোক মারা গেল, রাজনীতি করলেই পারতে! বাবা হেসে উত্তর দিল, তাতেও নীরিহ লোকগুলোই মারা পড়তো! ধর্মটা আবেগের জায়গা তাই ফলাফলটাও তাৎক্ষণিক!তুমি আজই খেতে চেয়েছিলে! রাজনীতিটা কুটিল এবং জটিল, এটি শুরু হতে সময় নেয় কিন্তূ একবার হলে থামতে বেশ সময় লাগে!
বাচ্চা বললো- "তোমার অনেক বুদ্ধি, বাবা.."
শকুন, "আরেহ, ধুর!এটা তো আমি মানুষের কাছ থেকেই শিখেছি, এদের একটা অংশ যখনই কোন অনিষ্ঠ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয় তখনই সহজ রাস্তা হিসেবে হয় ধর্মকে নয়তো রাজনীতিকে ব্যবহার করে........!!