আলোচনা ৩৪
জীবনের ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে কেউবা খুব কাছে থেকে দেখে জীবনকে, জীবনের রূপ, রস, গন্ধ খুব দ্রুতই চেখে দেখে, ম্যাচিউরদ হয়ে উঠে জীবনের অভিজ্ঞতায়। আবার কেউ বা আদুরে আহ্লাদে বড় বড় হতে হতে টের পায়না জীবনের রূঢ় বাস্তবতা, বুঝে উঠতে পারে না জীবনের কতটা ছন্দ আর কতটাইবা দ্বন্দ্ব।
তেমনই একটি প্রেক্ষিত নিয়েই কবি এ. এইচ লিমন রচনা করেছেন ‘নির্বাচিত কষ্ট’। নির্বাচনের প্রশ্ন তখনই আসে যখন অনেকগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি মাত্র বাছাই করতে হয়, যেমন নির্বাচিত সুখ, অনেক সুখের মাঝে বিশেষ কয়েকটি সুখকে আলাদা করে দেখা, নির্বাচিত কবিতা, অনেক কবিতার মধ্য থেকে বিশেষ কয়েকটি কবিতা নিয়ে আলোচনা কিংবা প্রকাশনা হলে, নির্বাচিত কবিতার প্রকাশনা। তাহলে আক্ষরিক সংজ্ঞায় অনেক কষ্ট থেকে নির্বাচিত কয়েকটি কষ্টকে আলাদা করে বলা, সেটাই ‘নির্বাচিত কষ্ট’। কিন্ত জীবনের প্রত্যেকটি পর্ব, প্রতিটি ক্ষন যখন কষ্টে থাকে তখন আর নির্বাচনের প্রয়োজন হয় না, আলাদা করে কোন বিশেষ কষ্টকে উল্লেখ করার দরকার হয় না। কবি এখানে ‘নির্বাচিত’ শব্দটি ইচ্ছে করেই তির্যক ভাবে ব্যবহার করেছেন বলেই আমার মনে হয়েছে। জীবনের প্রত্যেকটি পর্বে, ধাপে ধাপে কারো কারো কষ্টের রূপ বর্ণনা করেছেন আর বলতে চেয়েছেন, কোনটিকে নির্বাচন করবো, সবই নির্বাচিত কষ্ট।
এত চমৎকার বাস্তবতার ভিত্তিতে শিশুকাল, যুব কাল, ছাত্র জীবনের স্কুল কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, পরিনত কাল এমনকি প্রেম পর্বে কষ্টগুলো কিভাবে তাড়িয়ে বেড়ায় তারই ব্যাখা করেছেন আবার তুলনামূলক ভঙ্গিতে দেখিয়েছেন, কষ্টের বাইরে থাকা জীবনের ধারাবাহিকতা। একটি তুলনামুলক প্রেক্ষিতে কষ্টগুলো কেমন ‘কন্ট্রাস্ট’ তৈরি করে সেটাই কবি ও কবিতার বিশেষত্ব।
সাধারন ভাবনা থেকে স্কুলে শিক্ষক যখন সকল ছাত্রের কাছ থেকে একই ভাবে স্কুল পড়া কিংবা হোম ওয়ার্ক আশা করেন, তখন আড়ালে থেকে যায় সারাদিন কাজ শেষে যে ছাত্রটি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে কিংবা ঘুমিয়ে থেকে পরের দিনের কাজের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে তার কথা। কষ্টগুলো কবি খুব সরল ভাবে বলিয়েছেন কবিতার মুল চরিত্রের মধ্য দিয়ে, “পরীক্ষার শেষ ঘন্টা পড়তেই অন্যেরা দৌড়ে যেত গেটে,
মায়েরা টিফিন নিয়ে দাড়িয়ে আছে,বিকেলে আরেকটা পরীক্ষা ৷ আমি দুরে দাড়িয়ে তামাশা দেখতাম, ওদেরকে দুধের বাচ্চা মনে হতো তখন ৷ কিংবা “ স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমাই শহরে যা কাম্য নয় ৷শহুরের ব্যস্ত পথে ঘুরে ঘুরে আমি হন্যে হয়ে যাই ৷ সীসার মত গলতে থাকে আমার স্বপ্ন”।
আবার এত কষ্টের বেড়াজাল পারিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শুধুমাত্র ‘সাহিত্যে’ পড়ছে বলে প্রেমিকা অবজ্ঞা করে কেননা বর্তমান কর্পোরেট যুগে সাহিত্যি পড়াশুনা করে কেউ অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করতে পারবে না বলেই সর্বজন স্বীকৃত তাই তার জীবনে প্রেম থাকে না, কবি খুব সুন্দর ভাবে বিষয়টি লিখেছেন “সাহিত্যে পড়ে পাশ করে সংসার চালানো নাকি ইতিহাসে বিরল?। কবি শেষটা করেছেন দীর্ঘশ্বাস মাখা এক উক্তি দিয়ে “টলতে টলতে ফিরে আসি আগের জায়গায় ৷ সেই আমি আর আজকের আমি একই রকম ৷ মাঝখানে কেটে গেছে কত সময়!
অসাধারন একটি কবিতা মনে হল আমার তবে আমি এই কবিতার উপর আলোচনা করে খুব একটা তৃপ্ত হতে পারলাম না, মনে হচ্ছে আরও কিছু লিখা দরকার ছিল, কি যেন লেখা হল না। কবির জন্য শুভেচ্ছা রইলো।