আলোচনা ১৮৮
ইদানিং ফেসবুক চ্যাটিংকেও নেশা বলা হচ্ছে, এছাড়াও আছে নানা ধরনের গেম এর নেশা। এগুলো আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কিত সাম্প্রতিক সময়ের নেশা। নেশা’র সংজ্ঞায়ন কিভাবে করা হয়? যে কাজের নেগেটিভ ইফেক্ট, সেগুলোই কি নেশা? বারংবার একই কাজ নিয়ন্ত্রনহীনভাবে করা, সেগুলোই কি নেশা? নেশা কি ব্যক্তির নিজের বোধ বিবেকের উপর সংজ্ঞায়ন হবে নাকি এর কোন সার্ব্জনীনতা আছে? নেশা’র তালিকায় কোন কোন কাজগুলো রাখা হবে তার কি কোন জাতীয়করন বা আন্তর্জাতিক মাপকাঠি আছে?
কবি ১৩ রকম কাজ (মাদক সেবন, টাকা উপার্জন, জুয়া খেলা, বুড়ো বয়সে বিয়ে করা, জমি আকড়ে রাখা, টাকা পয়সা জমিয়ে কৃপনা করা, প্রেম করা, ঘুষ খাওয়া, সুদ খাওয়া, উকিলদের ক্লায়েন্ট ধরার কৌশল, রূপের চর্চা, অতিরিক্ত লাভের জন্য মজুতদারী ব্যবসা, পদের নেশা), সবগুলোকেই নেশা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যদিও একেকটি কাজ নেশা হিসেব কেউ কেউ আখ্যায়িত করলেও ভিন্ন ভিন্ন শব্দ দ্বারা বুঝিয়ে থাকেন যেমন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আসক্তি, প্রেমের ক্ষেত্রে জড়িয়ে পর ইত্যাদি। ঘুষ এবং সুদ এর ক্ষেত্রে ঘুষখোর, সুদখোর বলা হয়, ঘুষ কিংবা সুদ আসক্তি/নেশা বলা হয় না। শব্দের ভিন্নতা থাকলেও মূলত নেশা বা আসক্তিকেই বোঝানো হয়। কবি মিয়া সাইফুদ্দিন, তার “নেশা” কাব্য সরাসরি সবগুলোকে একটি মাত্র শব্দ ব্যবহার করে “নেশা” বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন। সেটা সঠিক হবে কি না তা ভাষাবিদ গন ভালো বলতে পারবেন।
যে কোন কাজ যখন নেশায়/আসক্তিতে পরিনত হয় তখন তার ফলাফল কখনো কখনো ভালো হতেও পারে কিন্তু তার একটা ক্ষতিকর প্রভাব থেকেই যায়। নিজের নিয়ন্ত্রন যখন হারিয়ে যায় তখন সেটা ভালো কিছু তৈরী করলেও আদতে তার ক্ষতিকর প্রভাব ব্যক্তিজীবনে (শারীরিক এবং মানষিক স্বাস্থ্যের উপর), সামাজিক জীবনে এবং জাতীয় জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। জীবনী শক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাবের কারনে তার নানা রকমের জটিলতা দেখা দেয়।
কোন কোন নেশার কারনে সামাজিক শৃঙ্খলা (যেমন সুদের নেশা, ঘুষের নেশা) ভেঙ্গে পরে, সমাজে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দেয় (যেমন-বহু বিবাহ), ব্যক্তির নেশার কারনে রাষ্ট্রিয় অর্থনীতি হুমকীর মুখে পরে (যেমন- অতি লোভের কারনে মজুতদারী ব্যবসা)।
কবি ১৩ জাতীয় কাজ যদি নেশার আকার ধারন করে তাহলে তার প্রভাব ব্যক্তি জীবনে, পরিবারে, সমাজে তথা রাষ্ট্রে অস্থিরতা তৈরী করে তার কিছু উদাহরন দিয়েই পুরো কাব্য রচনা করেছেন। আমার ধারনা এ জাতীয় কবিতা সমাজে সচেতনা বৃদ্ধিকল্পে এবং ব্যক্তির আচরন পরিবর্তনে ভুমিকা রাখে।
কবি’র জন্য রইলো শুভেচ্ছা