আলোচনা ১৬৬
দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, দহন, হতাশা এবং বিপরীতে সুখ, আনন্দ, উল্লাস, বিলাস ইত্যাদি মানুষের জীবনে অবশ্যম্ভাবি বিষয়। প্রত্যেকের জীবনেই দুটো বিপরীতমুখী সময় আসে এবং অতিক্রম করতে হয়, এমন কোন মানুষ কি আছে পৃথিবীতে যাকে এ দুটো সময় অতিক্রম করতে হয় না? বিপরীতমুখী দুটো সময়/ঘটনাপ্রবাহের পরিমান কি সমান? সবার জীবনেই কি বিষয়গুলো একই ভাবে আসে? মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রানী কিংবা পাখিকূলের মধ্যেও কি এমন বিপরীতমুখী ঘটনা ঘটে?
কবি মিনু গরেট্রী কোড়াইয়া (বৃষ্টিরানী) এর কবিতা “নানান অজুহাতে খুঁজি দুঃখ ভোলার” পড়ার পর প্রথমেই উপরের প্রশ্নগুলো মাথায় আসছিলো। এমন না যে, বিষয়গুলো আগে জানা ছিল না বা আমি আমার নিজের জীবনে পর্যবেক্ষন করনি, জানা বিষয়েই নুতন করে ভাবিয়ে তুললো। একই বিষয় মাঝে মাঝে নুতন করে ভাবনার উদ্রেক করে।
যেহেতু অন্য কোন প্রানীর মধ্যে মানুষের মতো এতোটা বিপরীতমুখী সময় অতিক্রম করতে হয় না তাই মানুষেরই সেই দক্ষতা আছে, চূড়ান্ত মাত্রায় সুখ উপভোগ করা এবং চরম দুঃখের মধ্যেও নিজেকে সামলে রাখা। সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টি করার সময়ই জানতেন এমনটা ঘটবে, তাই যুগে যুগে ধর্ম গ্রন্থের মাধ্যেমে দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন।
ইসলাম ধর্মে যেমন বলা হয়েছে-
কষ্টের সাথেই আছে স্বস্তি
আবার অন্যত্র বলা হয়েছে
কষ্টের পরেই আছে স্বস্তি
অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা মানুষের মধ্যেই দুঃখ কষ্ট সামলে নেয়ার ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছেন, আমাদের শুধু কৌশলগুলো খুঁজে নিতে হবে, প্রজ্ঞার সাথে, ধৈর্যয়ের সাথে। কবি মিনু গরেট্রি কোড়াইয়া তার কাব্যে সেই কথাই বলতে চেয়েছেন।
তিনি কতো রকম উপায়ের কথা বলেছেন, দুঃখ ভোলার জন্য, তার ভাষায়-“নানান অজুহাত খুঁজি দুঃখ ভোলার”
আকাশে, অমাবশ্যার কুসুম পর্যবেক্ষন, পাখির গান, বৃষ্টির কলতান, গান, কীর্তন, পূজার গৃহে জ্বালাই ধূপ জালানো, কপালের টিপ, চোখের কাজল, সুগন্ধি আতর ইত্যাদি কত রকম ভাবেই না মানুষ নিজেকে ভালো রাখার, আনন্দিত রাখার চেষ্টা করে থাকে। কবি, নানা রকম উপমা, উদাহরন ব্যবহার করে, দুঃখ ভুলে থাকার উপায় খুঁজেছেন, অন্যদের খোঁজার প্রতি ইশারা করেছেন।
কবিতাটি ভালো লাগার এবং আলোচনা করার একটি প্রধান কারন, দুঃখ কষ্ট, জ্বালা যন্ত্রনা ইত্যাদি মানুষের নিত্য সঙ্গী কিন্তু কবি এখানে এসব দুর্যোগপূর্ন সময়ে কিভাবে নিজেকে সামলে সামনে এগুনো যায় তার বেশ কিছু পথ বাতলে দিয়েছেন। সবই আমরা তা জানি কিন্তু এক বাস্কেটে অনেক কিছু একসাথে পাওয়া।
কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা