আলোচনা ১৫৩
যে কোন অন্যায়, অনিয়ম, অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষ নানাভাবেই প্রতিবাদ করে থাকে, রাজনৈতিক ভাষায় প্রতিবাদ কিংবা রাজনৈতিক প্রতিবাদের ধরন থেকে একজন ফটোগ্রাফার এর প্রতিবাদের ভাষা ও ধরন ভিন্ন হবে সেটাই স্বাভাবিক। আবার কবি, সাহিত্যিকদের প্রতিবাদের ভাষা এবং কায়দা কানুন তাদের হাতিয়ার কবিতা কিংবা সাহিত্যের মাধ্যমেই হবে। আলোচ্য কবিতাটিও একটি প্রতিবাদমূলক যার শিরোনাম “মামলার আরজি”, কবি এইচ আই হামজা।
এখানে রূপকতার মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রে, সমাজে যখন নানারকম অন্যায়, অত্যাচার চলতে থাকে তখন মানুষের শেষ ভরসার আশ্রয়স্থল থাকে, শেষ ভরসার জায়গা থাকে বিচার ব্যবস্থার উপর। কিন্তু সেই বিচার ব্যবস্থাই যখন ভেঙ্গে পড়ে তখন আর কিছু অবশিষ্ট থেকে না। কবি এখানে আক্ষরিক ভাবেই, বিচার ব্যবস্থার উপর অনাস্থা জ্ঞাপন করেননি। রূপকতার মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছে, বিচার ব্যবস্থা আরো কনেক বেশী শক্তিশালী হওয়া দরকার।
খুব চমৎকার করে বলেছেন, “ ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই মাতৃগর্ভে মৃত্যু হলো যে শিশুটির, আমি তার পক্ষে মামলা করতে ইচ্ছুক”, অর্থাৎ এখানে অন্যায়ভাবে গর্ভপাত (নানা কারনে গর্ভপাত যখন আশংকার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়) এর জন্য সঠিক বিচার ব্যবস্থা গড়ে উঠুক, সেটাই বলতে চেয়েছেন। যে শিশুটি অন্যায়ভাবে গর্ভপাতের শিকার হলো, তার পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য, কবি মামলা করতে চেয়েছেন। রূপকতার আড়ালে, একটি লাশেরও কিছু অধিকার আছে, যে অধিকার ক্ষুন্ন করছে মানুষ কিন্তু তার পক্ষে কোন আইন নেই, কোন সঠিক বিচার ব্যবস্থা নেই। ফলে লাশ হয়ে যাওয়া শিশুটিকে সামনে এনে কবি একটি সঠিক বিচার ব্যবস্থা না থাকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।
একই ভাবে, অপঘাতে মৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু সহ নানাভাবে মৃত্যু ঘটনাকে কেন্দ্র করে কবি একটি সামগ্রিক এবং সঠিক বিচার ব্যবস্থা না থাকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন কবিতার মাধ্যমে। বিচার ব্যবস্থার একটি আমূল পরিবর্তন চেয়েছেন, প্রয়োজনে আইনী সংশোধন করে হলেও সঠিক ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে গড়ে তোলা, যেন মানুষ সঠিক সময়ে, সঠিক বিচার পেতে পারে, এটাই কবিতার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
কবি, খুব অল্প পরিসরে, একটি কঠিন জায়গায় আঘাত করেছেন, ভবিষ্যত নীতি নির্ধারকদের সমাজ ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, আইনী ব্যবস্থা খুব সুক্ষ্মভাবে দেখার একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন এবং তার একার প্রতিবাদলিপির সাথে সবাইকে একাত্ম হবার আহ্বানও জানিয়েছেন।