আলোচনা ১১১
বিষণ্ণতা, একাকীত্ব, বিচ্ছিন্নাতাবোধ-বাংলা ভাষায় এরকম কিছু শব্দ আছে যার গভীরতা এত বেশী, মাঝে মাঝেই কুল কিনারা খুঁজে পাই না। কবিতায় ব্যবহৃত শব্দ 'বিষণ্ণতা' আক্ষরিকভাবে যা বলতে চায়, পুরো কবিতা যেন তার চেয়েও বেশী কিছু বলেছে। এত অল্প কথায় অনেক বেশী গভীরতা অনুভব করেছি আমি। ভেতরের এক বোবা কান্না তোলপাড় করে দেয়া এক অনুভব।
বিষণ্ণতা কি কোন অসুখ? বিষণ্ণতার উৎস কি? কেন মানুষ বিষণ্ণতায় ভোগে? বিষণ্ণতার সাথে দুঃখ-কষ্টের সম্পর্ক কি? ধনী মানুষ কিংবা সুখী মানুষ কি বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে? ইত্যাদি নানাবিধ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন মনোবিজ্ঞানীগন, যতটা উত্তর দিতে পেরেছেন তার চেয়ে বেশী প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানাই রয়ে গেছে। কবি তামান্না ফেরদৌস তার কাব্য “মাঝে মাঝে বিষণ্ণতা চেপে বসে রোদের ভেতর” এ বিষণ্ণতার কারন লুকিয়ে রেখেছেন বেশ যত্ন করে, বেশ দক্ষতার সাথে।
“মাঝে মাঝে বিষন্নতা চেপে বসে রোদের ভেতর”, রোদ মানে উজ্জ্বল, টান টান কর্মক্ষম সময়, সতেজ ভাবনা কিন্তু এরকম সময়য়েও মানুষ বিষণ্ণ হতে পারে, সবার মাঝে থেকেও যেমন একাকীত্ব অনুভুতি, বিচ্ছিন্নতার অনুভুতি হতে পারে তেমনি রোদের ভেতরও বিষণ্ণতা। বিষণ্ণতার পথ পরিক্রমায় সব ক্ষয়ে যায় শুধু থেকে যায় এক বোধদয়। এমনি এমনি বিষণ্ণতা আসে না, পেছনের কারন থেকেই তৈরি হয় নুতন বোধ, নিশ্চিন্ততার মধ্যেও প্রলয়। খুব অল্প কিছু শব্দ ব্যবহার করে, খুব হিসেব করে শব্দের কোন অপচয় না করেই কবি এক গভীর অনুভুতি, এক অদ্ভুত সময়কে ধারন করেছেন তার কাব্যে। মন ছুঁয়ে যায়, নিজেকে প্রতিস্থাপন করা যায় এমন এক সময়ের চিত্রায়ন কেননা প্রায় সব মানুষই জীবনের কোন না কোন সময়ে এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়।
কবির জন্য রইলো একরাশ শুভেচ্ছা এবং ক্রমাগতই গভীর অনুভুতি সম্পন্ন কবিতা উপহার দেয়ার প্রেরনা। ভাল থাকবেন সব সময়।