আলোচনা ১৭৭
মানুষের কি কোন উপসংহার টানার, কোন বিচারের রায় দেয়ার এখতিয়ার আছে? মহান আল্লাহ তায়ালা কি মানুষকে সে দায়িত্ব কিংবা ক্ষমতা দিয়েছেন? তা না হলে কি করে বলি “বংশ সহ ধ্বংস হবে...”?
গতকালই প্রায় একই রকম একটি কবিতা “রাক্ষুসে পুলিশ” নিয়ে আলোচনা করেছিলাম, আলোচ্য কবিতাটিও প্রায় একই ধরনের। একই ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ, আগেরটা ছিলো পুলিশের বিরুদ্ধে আজকেরটা মুখোশধারী মুসল্লিদের বিরুদ্ধে। কিন্তু দুজন কবি’র প্রকাশ ভঙ্গী, কবিতার থীম নির্বাচন, দৃষ্টিভঙ্গি......... প্রায় একই, সে জন্য খুব আশ্চর্য হয়ে, আজ আবার একই রকম আরেকটি কবিতার আলোচনা লিখছি।
আলোচ্য কবিতা “ লোক দেখানোর মুসল্লি”, কবি আশরাফুল ইসলাম, যা বলতে চেয়েছেন তার সাথে দ্বিমত থাকার কোন কারন নেই, যেমন- আলিম হয়ে মিথ্যা কথা বলা, লোক দেখানো মুসল্লি সাজা, অসৎ কাজ করা ইত্যাদি ইত্যাদি। অল্প কথায় মুসল্লিদের এ সমস্ত কাজ কর্মে লিপ্ত থাকাকেই উনি “লোক দেখানো মুসল্লি” বলতে চেয়েছেন।
বাস্তবে কথাগুলো হয়তো সত্য, কিন্তু আমরা খালি চোখে যা দেখি, প্রকৃত অর্থে সব সত্য নাও হতে পারে। কারনের পেছনের কারন আমরা জানি না, কিন্তু আমরা কতগুলো শব্দ (ভন্ড, মুখোশধারী ইত্যাদি) মুসল্লিদের ক্ষেত্রে খুব সহজেই ব্যবহার করে থাকি, একই কাজ অন্যরা করলে তখন এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করি না অর্থাৎ মুসল্লীদের থেকে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশী। মুসল্লী বনাম সাধারন মানুষ (অ-মুসল্লী) দের ক্ষেত্রে আমাদের সাধারন কিছু দৃষ্টিভঙ্গি আছে যা ফুটে উঠেছে কবিতায়-
১। মুসল্লি মানেই তিনি পারফেক্ট মানুষ হবেন, তার দ্বারা আর কোন অপকর্ম হতে পারে না, তার কোন ভুল হতে পারে না। কিন্তু পৃথিবীতে কোন মানুষই পারফেক্ট হত পারে না। মানুষ ভুল করবে, আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাইবে, আবার ভুল করবে-এভাবেই চক্রাকারে মানুষের জীবন শেষ হবে। এটা আল্লাহ তায়ালা নিজেও জানেন কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা মুসল্লিগন পারফেক্ট হবেন।
২। একই কাজ যে কেউ করতে পারেন, মানে ভুল কাজ, কিন্তু সেটা মুসল্লীগন করলে আমরা খুত ধরি বেশী, আমাদের চোখে ধরা পরে বেশী, অন্য কেউ একই কাজ করলেও তা এড়িয়ে যাই। সেটাও প্রত্যাশা থেকেই। আমরা ভুলে যাই, মুসল্লীগনও মানুষ, তাদেরও ভুল হতে পারে অন্যদের মতোই।
৩। মুসল্লী কিংবা সাধারন মানুষ, অনেক সময়ই এমনটা হয়, আমরা যা করতে চাই, যতোটা ভালো থাকতে চাই, পারিপার্শিক পরিস্থিতির কারনে তা সব সময় পারি না। অনেক সময়ই ভালোর কাছে মন্দ জয়ী হয়। অনেক চেষ্টার পরও পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রনে থাকে না।
৪। লোক দেখানো মুসল্লি- খুবই আপেক্ষিক শব্দ। মুসল্লি বিবেচনা করবো কি দেখে, তার আমল নাকি তার বাহ্যিক বেশ ভূষা, তার আমলের বিচার করার কোন এখতিয়ার আমাদের নেই, কিন্তু তার বাইরের ড্রেস দেখে অবচেতনভাবেই তার নিকট আমাদের কিছু বাড়তি প্রত্যাশা তৈরি হয়, আর যখন সেটা ব্যহত হয় তখনই তাকে নানা শব্দে আখ্যায়িত করে থাকি।
৫। গীবত এতোটাই ভয়াবহ যে আমরা কল্পনাও করতে পারি না। আমাদের নিজেদের কথা যদি চিন্তা করি, এমন কোন দিন কি পাবো যেদিন আমরা কোন গীবত করি না, ঘন্টায় ঘন্টায়, গীবত করছি। কোনটা গীবত আর কোনটা না, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনাই আমাদের অনেকের নেই। এমনকি মুসল্লীদের মধ্যেও অনেকের গীবত সম্পর্কে খুব ভালো ধারনা নেই। যে কারনে, এখানে সেখানে ওয়াজ মাহফালে, এমনকি মসজিদের খুতবায়ও আমরা মুসল্লীদের গীবত করতে দেখি। একজন অন্যজনের নামে সারাক্ষন নিন্দে করেই যাচ্ছেন, গীবত করেই যাচ্ছেন। শুধুমাত্র যদি আমরা সবাই গীবত বন্ধ করতে পারতাম তাহলেই অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো।
মুল বক্তব্য কবি তুলে ধরেছেন খুব অল্প কথায়, আমার আলোচনার মূল বক্তব্যও একটাই, কোন ব্যক্তি, ইস্যু বা থীম নিয়ে বহুমাত্রিক ধারনায় কাব্য হলে সেটা সকল পাঠকের কাছেই গ্রহনীয় হয় বেশী।
কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা