আলোচনা ৮৩
মানুষের নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকে যাকে ইংরেজিতে বলা হয় লিমিটেশন। কোন কোন সীমাবদ্ধতা তৈরি হয় সক্ষমতার অভাবে আবার কোনটা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী কিংবা মূল্যবোধের অভাবে, কিন্তু আমারা দু’টোকেই একই বিচারে রাখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি যদিও দু’ধরনের সীমাবদ্ধতার মাঝে থাকে যোজন যোজন দূরত্ব। সক্ষমতার অভাবে তৈরি সীমাবদ্ধতাগুলোকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো খুব একটা যুক্তিযুক্ত নাও হতে পারে কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গী কিংবা মূল্যবোধের অভাবে সৃষ্ট সীমাবদ্ধতাকে অবশ্যই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া দরকার। কবি আশিকুজ্জামান (আশিক) তার কাব্য ‘সীমাবদ্ধতা’তে দ্বিতীয় প্রকার সীমাবদ্ধতাকেই মূল প্রতিপাদ্য করেছেন।
মানুষ তার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই অনুভূতি প্রকাশ করে থাকে যেমন- দেখা, শোনা, ঘ্রান নেয়া, কান্না করা ইত্যাদি কিন্তু ইন্দিয় গুলো মুলত একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে, মুল কাজ সস্পন্ন করে পেছনে থাকা তথ্য, শিক্ষা, মূল্যবোধ.........এবং তার মাধ্যমে তৈরি হওয়া দৃষ্টিভঙ্গি। ফলে আমরা বাহ্যিক ভাবে যা দেখি সেটা সব সময় আসল দেখা নাও হতে পারে, যদিনা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিকভাবে কাজ না করে। আমি হয়তো কোন ক্ষুধার্ত মানুষকে চোখের সামনেই দেখছি কিন্তু মনে কোন বেদনা অনুভব নাও হতে পারে যদি আমার দৃষ্টিভঙ্গি ‘ক্ষুধার্ত’ বিষয়ের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল না থাকে। ফলে চোখ দেখার মুল তাৎপর্য, বাহ্যিক ভাবে দেখা নয়, অনুভূতিশীল হওয়া, সংবেদনশীল থাকা, তবেই আমরা তাকে সঠিক দেখা বলতে পারি।
এ পর্যন্ত আলোচিত তাত্ত্বিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করেই কবি রচনা করেছেন ‘সীমাবদ্ধ’ কবিতা যেখানে বেশ কয়েকটি উপমা ব্যবহার করে তাত্ত্বিক কাঠামোটি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। কবি লিখেছেন-
• “দু'চোখের দৃষ্টিশক্তি প্রখর, কিন্তু দেখেও দেখিনা, কারণ, মানসিকভাবে অন্ধ”
• “দু'কানের শ্রবণশক্তি অতুলনীয়, কিন্তু শুনেও শুনিনা, কারণ, বিবেকের দুয়ার বন্ধ”
• “দু'বাহুর কর্মক্ষমতা দারুন, কিন্তু করেও করিনা, কারণ, ভালোকাজ লাগে মন্দ”
• “দু'পায়ের জোরও অনেক, কিন্তু হেটেও হাটিনা, কারণ, পকেটে টাকার গন্ধ”
কবি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের উপমা ব্যবহার করেই মুল বক্তব্য অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উপস্থাপন করেছেন যেন পাঠক নিজেকে মিলিয়ে নিতে পারেন, আশেপাশের বাস্তব চিত্র দেখে উপলব্ধি করতে পারেন।
অসাধারন একটি প্রত্যয় নিয়ে কাব্য রচনা যার সাথে মানবিকতা ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত, কবির জন্য রইলো অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা।