আলোচনা ১৮৯
জীবনের একটি সহজ দর্শন নিয়ে লেখা কাব্য “জীবনের উপলব্ধি” যা আমরা অনেকেই ভালো করে বুঝতে পারি না কিংবা বুঝলেও তা মেনে চলি না। কিছু কঠিন সত্যকে ধারন করতে পারলে, জীবন অনেক সহজ হয় অন্যথায় জীবনের বীভৎসতা দেখতে হয় পদে পদে। জীবনের এ ধরনের উপলদ্ধিগুলো সচরাচর প্রথম জীবনে আসে না, অনেকে মধ্য বয়সে কিংবা অভিজ্ঞতার ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে অবশেষে উপলদ্ধি করতে শেখেন।
কবি মৌসুমি দাস তার “জীবনের উপলব্ধি” কাব্য বেশ কয়েকটি সত্যের দ্বার উন্মোচন করেছেন-
১। নিজের কষ্ট, বেদনা, দহন, ভারাক্রান্ত মনকে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে হয় যত্ন করে। বেদনাকে “বেদনার” মতোই আপন গতিতেই চলতে দেয়া উচিত। বেদনারও একটা নিজস্ব গতিপথ আছে, সেখানে বাঁধা পড়লে তা আরো ভয়ংকর রূপ ধারন করে। মৌসুমি দাস এর এই উপলব্ধিটা অনেকটাই “তাও তে চিং” এর দর্শন কাব্যের অনুরূপ। বেদনাকে অন্যের কাছে যতো বেশী প্রকাশ করা হয় তা ততো বেশী গুনে ফিরে আসে নিজের কাছেই, বরং নিজের কাছে যত্নে রাখতে পারলে তা অনেকটা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে, অনেকটা স্বস্তি দিতে পারে বেদনার নিজ গুনেই।
জীবন বেদনায় পরিপূর্ণ
প্রকাশ করলেই হবে ছিন্ন,
বেদনা কে থাকতে দাও বেদনার মত
কেউ করতে পারবে না তোমায় ক্ষত।
২। শুধুমাত্র একটু হাসি জয় করতে পারে বিশ্ব, ভুবনজয়ী হাসি, হাসি একটি উত্তম মিডিসিন…… ইত্যাদি নানারকম শ্লোগান, মটিভেশন, বানী চিরন্তনী আমরা শুনে থাকি।। সবই কি গালগল্প নাকি সত্যতা আছে কিছু? জীবন দর্শন বলে, হাসিই হলো জীবনে মূল দর্শন, ধর্মতত্ত্বও হাসির মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করাকে উৎসাহিত করে থাকে। আলোচ্য কবিতায়ও কবি সেই একই সুর দিয়েছেন আমাদের। একমাত্র হাসির মাধ্যমেই কষ্টকে জয় করা যায়।
সবাইকে দেখাও তোমার হাসি
বলবে তখন ওর সঙ্গে একটু মিশি,
কষ্টগুলোকে উড়িয়ে দাও হাসির ছলে
সুখগুলো ধরবে তোমায় মিলে।
৩। “মেনে নেয় এবং মনে নেয়া”, জীবনের জন্য দুটোই জরুরী পদক্ষেপ। সবকিছু “মনে নিতে চাইলে”, অন্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলা মুশকিল হয়ে পরে, সব সময় সেটা সম্ভব নাও হতে পারে। বৈচিত্র্যকে সম্মান দিয়েই অনেক সময় “মেনে নিতে হয়”। মেনে নেয়া মানেই সব সময় পরাজিত হওয়া, হার মানা… এমন ভাবনা জীবনের কঠিনতর অবস্থাকেই নির্দেশ করে। মেনে নিতে শেখাও এক ধরনের পারদর্শিতা, এক ধরনের দক্ষতা যা জীবনের অনেক জটিল পরিস্থিতিকে সামাল দিতে সাহায্য করে। কষ্টকে দূর করার একটি অভিনব কৌশল হলো “মেনে নিতে শেখা”, কবি সে কথাই বলতে চেয়েছেন অকপটে।
মানাতে শেখো একটু তুমি
নিজের কাছে হয়ে যাবে তুমি দামি,
কষ্টগুলোকে দাও উড়িয়ে
সবাই ভালোবাসা দেবে তোমায় মুড়িয়ে।
৪। অনেকে ভাগ্যে বিশ্বাসী না হয়ে বরং কর্ম, আত্মবিশ্বাস এবং পরিশ্রমকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যদিও প্রায় সকল ধর্মই মানুষকে ভাগ্য এবং কর্ম এর মধ্যকার সমন্বয়সাধনকে উৎসাহিত করে থাকে। কবি তার আলোচ্য কাব্যে ভাগ্য এবং কর্মের মধ্যকার সমন্বয়ের মাধ্যকেই কষ্টকে জয় করতে চেয়েছেন।
জীবনকে ছেড়ে দিও না ভাগ্যের কাছে
তাহলে জীবন হবে না একটু মিছে,
পরিশ্রম কর একটু উঠে
কষ্টগুলোকে পালাবে এক ছুটে।
কবিতাটি জীবনের জন্য বেশ কয়েকটি দিকনির্দেশনা মূলক গতিরেখা একেছেন।
কবি’র জন্য রইলো শুভেচ্ছা।