আলোচনা ২০১
কবিতাটি অনেকদিন আগে পড়ার পরই আলোচনায় নিয়ে আসার আগ্রহ ছিল, নির্বাচন করে রেখেছিলাম, গত এক সপ্তাহে সময়ের অভাবে লিখা হয়নি। আলোচনা লিখার পর, মন্তব্যগুলো পড়ছিলাম, বেশকিছু মন্তব্য আমার দারুন লেগেছে, সেগুলোও কবিতার আলোচনাকে সমৃদ্ধ করবে, আলোচনা শেষে আমার পছন্দের (ভাল মন্দের বিচার নয়, আমার ভালো লাগার বিষয়) কিছু মন্তব্যগুলো সংযুক্ত করে রাখলাম।
আমরা অনেকেই কবিতাকে নানাভাবে শ্রেনীবিভাগ করে থাকি, প্রেমের কবিতা, বিরহের কবিতা, কষ্টের কবিতা, আরো আছে...। আলোচনার সূচনাতে, তিনটি শ্রেনীবিভাগই রাখলাম। প্রেম, বিরহ, কষ্ট/দহন... আলাদা করা যাবে কি? কিভাবে? এমন তো নয় যে, প্রেম সফল হয়ে ওঠে মিলনে অন্যথায় সেটা বিরহ, আবার প্রেমের সফল হবার পর কি আর কোন বিরহ থাকে না, কোন লুকানো কষ্ট থাকা না? সবগুলোই একেকটা অনুভূতি, সময়ে দাবী। এক অনুভূতির ভেতর অন্যটি মিশে থাকতেও পারে আবার ভিন্নও হতে পারে। মানুষের অনুভূতিগুলো এতো বিশাল ক্ষেত্র দখল করে থাকে যে, মানুষ নিজেই তার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে অনেক সময়। কখনো বা অনুভুতিকে ব্যক্ত করার সঠিক ভাষাও খুঁজে যায় না। আলোচ্য কবিতটি শ্রেনীবিভাগ হিসেবে দেখাচ্ছে, প্রেমের কবিতা কিন্তু কবিতার মাঠ জুড়ে আছে কষ্টের আবহাওয়া আবার শিরোনামে লেখা আছে “সুখের প্রহরী”, ফলে প্রেম, বিরহ, কষ্টগুলো একাকার হয়ে আছে কবিতার লাইনে লাইনে।
কঠোর সুখের প্রহরী, শিরোনাম দারুন লেগেছে। কষ্টগুলো, সুখ গুলোকে পাহারা দিয়ে রাখছে দারুন এক অনুশাসনে,কঠোরভাবে। কষ্টের এক অসাধারন অভিব্যক্তি!!! পুরো কবিতা জুড়ে গতানুগতিক শব্দের বাইরে গিয়ে কষ্টের অনুভূতিকে ব্যক্ত করেছেন ভিন্ন এক মাত্রায়, কবিতার মাধুর্যে এবং দক্ষ এক কাব্যিক ঢঙে। কবিতার শব্দ চয়ন থেকে শুরু করে, মেটাফোর এর ব্যবহার এবং অভিব্যক্তি প্রকাশের দারুন এক অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন কবি মার্শাল ইফতেখার আহমেদ তার কাব্য “কঠোর সুখের প্রহরী” তে।
কষ্টকে নিয়ন্ত্রন করার নানামুখী প্রচেষ্টা দেখা যায়, কবিতায় লিখে দিলে তা ডানা মেলে সহস্র পাঠকের মনে, বার বার ফিরে আসে কবির নিজের অন্তরে। বাতাসে ছুড়ে দিলে, বাতাসে ভেসে বেড়ায়, মৃত্তিকায় ছড়ালে তা আবার দিগন্ত জোড়া ফসলের ক্ষেতের মতো দুঃখের ক্ষেত তৈরী হয়। কি অসাধারন বর্ননা, কষ্টের যেন কোন বিনাশ নেই, যেখানে যেভাবেই তার বিনষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে, তা ফিরে ফিরে আসছে বহুগুণে।
কষ্টের কোন সীমানা থাকছে না, কোন তল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নদীর স্রোতে কষ্টকে মিশিয়ে দিলে তা তলিয়ে যায় না বরং সমুদ্র সফেদ ফেনার মতো ঝলমল করে ওঠে। কষ্টকে কবি, নানারূপে, নানা ভাবে, প্রকৃতির নানাপ্রান্তে ছড়িয়ে থাকতে দেখছেন। যেখানেই যাচ্ছেন, কষ্টগুলো নিজের সাথে যাচ্ছে, ভুলে থাকার জন্য প্রকৃতির মাঝে নিজেকে মেশাতে চাচ্ছেন কিন্তু সেখানেও কষ্টগুলো হাজির হচ্ছে, এক দুঃসহ যন্ত্রনা বুকে বয়ে বেড়াচ্ছেন কবি, কষ্টগুলো বার বারই ফিরে আসছে।
সূর্য্যের প্রখর তাপ কিংবা আগুনের লেলিহান জ্বলে ওঠা, কষ্টের দগ্ধতাকেও হার মানায়। বৃষ্টির কাছে আশ্রয় নেয়া হলে, বৃষ্টি ভিজিয়ে দেয় ঠিকই কিন্তু সেটাও কষ্টের বৃষ্টি।
শেষ লাইনটি দীর্ঘদিন মনে রাখার মতো। কবি শেষটা করেছেন দারুন এক কাব্য মোহময়তায়। কষ্টগুলো নিজের কাছেও বলা যায় না, বাহ্যিক সুখগুলো প্রহরীর মতো আটকে দেয় ফলে ঐশ্বর্যময় একাকীত্বের নিগুঢ় নির্লিপ্ত দরজায় ঠাই পায় কষ্টগুলো।
কষ্ট, বিরহ, দহন... ইত্যাদি নিয়ে অনেক কবিতা পড়েছি, প্রতিনিয়তই পড়ছি। কিন্তু আলোচ্য কবিতাটি পুরোনো ইস্যু হলেও উপস্থাপনার ঢং একেবারেই আলাদা, ভিন্নতার দাবী রাখে।
কবি’র জন্য রইলো শুভেচ্ছা
এই কবিতার উপর, আমার কিছু পছন্দের, অন্যদের মন্তব্যঃ
আর ইসলাম
কেয়াবাত!! চমৎকার! দারুণ লিখেছেন সম্মানিত কবি। আহা! কি আবেদন! সত্যি বলছি মন ছুঁয়ে গেছে। দুঃখ গুলো এমনই হয়। কাউকে বললেও পরে সুযোগ বুঝে উল্টো সেই দুঃখ দেয়। আজকের কবিতার সবগুলো লাইন-ই দারুণ! শেষ স্তবক টা মনে গেঁথে যাওয়ার মতো সুন্দর দুঃখ কবি। অনেক অনেক অভিনন্দন ও শুভকামনা রইলো সম্মানিত কবি।
মোঃ সিরাজুল হক ভূঞা
ঐশ্বর্যময় একাকীত্বের নিগুঢ় নির্লিপ্ত দরজায়, কঠোর সুখের প্রহরীরা দাঁড়িয়ে কথা কয়। শব্দচয়ন এমন সৌন্দর্যময়; মন প্রাণ ছুঁয়ে যায়, অনবদ্য ভালোবাসায়। অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আপনার জন্য শ্রদ্ধেয় প্রিয় বরেণ্য কবি। ভালো থাকবেন সবসময়।
এম.এইচ.শ্রাবন
বৃষ্টিকে শোনালে সে আরো ভারী কষ্টে ঝরে পড়ে।অপূর্ব! দুর্দান্ত লিখেছেন কবি। কবিতার শিরোনাম প্রেমের কবিতা হলেও আমার কাছে মনে হচ্ছে স্বার্থক এক জীবনবোধের কবিতা। আমাদের জীবনের কষ্টের ভাগ কেউ নিতে চায় না,নিলেও আবার সময়ের ব্যবধানে ফিরিয়ে দেয়, সেটাই ফুঁটে উঠেছে আপনার অনন্য কাব্যিকতায়।শুভকামনা নিরন্তর গুরু।
সুবীর ভট্টাচার্য্য
শ্রদ্ধেয় কবি, আপনার কবিতায় মন্তব্য করতে গিয়ে বারবার পড়তে হল। আর কি আশ্চর্য এক এক বার এক একটি লাইনের মাধুর্যে সিক্ত হয়ে গেল, হৃদয়ের ভালোলাগার সুপ্ত প্রকোষ্ঠগুলো।
আর যখন শেষ লাইন পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম, শিরোনাম এসে বলল, তফাত যাও, ঐশ্বর্যময় একাকিত্বের নিগুড় নির্লিপ্ত দরজা, তোমার জন্য খোলা হবে না। যদি খোলা যায়, তবে তা খুলতে পারে তারই জন্য, যে বহুদিন এই দরজার বাইরে অপেক্ষমান।
শ্রদ্ধেয় কবিকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
প্রনব মজুমদার
শেষ স্তবকে হতবাক হতেই হয়...
যেন পুঞ্জীভূত কষ্টের স্রোতে ভেসে প্রেমিক প্রেয়সীর দরজায়...
সে একাকিনী কিন্তু তাকে ঘিরে আছে নির্লিপ্ত গুঞ্জনধ্বনি...
পাঠক মনে প্রশ্ন সত্যিই কি প্রেম নিরূপায়?