কবিতা আলোচনা-২০০ তম (সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে মে ২০২২)
আলোচনা ২০০
আসরে ২০০ তম কবিতা আলোচনা করছি, আসরে নবীন কবি সংহিতা গাঙ্গুলী এর কবিতা, “কবি মন” (এরই মধ্যে তিনি ২৭টি কবিতা প্রকাশ করছেন)
আমরা প্রায়শই নানা ধরনের শব্দজট নিজেরাই তৈরী করি, পরে আবার নিজেরাই এর ব্যাখা দিতে পারি না সঠিক ভাবে। সাধারন মানুষ, অসাধারন মানুষ, জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবি মানুষ, শ্রমজীবি মানুষ ইত্যাদি। এই যে, নানা বিশেষন দিয়ে থাকি, কখনো পেশাকে কেন্দ্র করে, কখনো কোন দক্ষতাকে কেন্দ্র করে আবার কখনো বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করে। একজন কৃষক কি বুদ্ধিজীবি? একজন জুতার ইন্ডাষ্টিতে জুতার ডিজাইনার কি বুদ্ধিজীবি? একজন কবি? আরজ আলী মাতব্বর যার কোন একাডেমীক ডিগ্রী ছিল না, তিনি কি বুদ্ধিজীবি?
একজন মানুষ একই সাথে সাধারন এবং অসাধারন কি হতে পারে? একই সাথে শ্রমজীবি, বুদ্ধিজীবি, সাধারন এবং অসাধারন কি হতে পারে? কবিদের কি ভিন্ন কোন মন থাকে? তাহলে কি সাধারন মন, অসাধারন মন... এ রকম হবে? সাধারন মন কোনটি এবং অসাধারন মনটি কোনটি? এরকম নানা প্রশ্নবানে নিজেই জর্জরিত হচ্ছিলাম যখন কবিতাটি পড়ছিলাম।
কবি সংহিতা গাঙ্গুলী, কবি মন অন্য মানুষের মনের থেকে ভিন্ন বলতে চেয়েছেন, যে কারনে আলাদাভাবে “কবি মন” বলতে হলো। যিনি কবিতা লিখেন না শুধু কবিতা পড়েন, তার মন তাহলে কেমন হবে? পাঠক মন? সে অর্থে শ্রমিক মন, পুরুষ মন, নারী মন, শিশু মন, কৃষক মন ইত্যাদি। তাহলে মন পরিচালিত হয় একজন মানুষের পারিপার্শিকতা, তার পেশা, তার ধ্যান জ্ঞান, তার চিন্তা ভাবনা, তার একাডেমীক এবং নন-একাডেমীক শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ... ইত্যাদি দ্বারা। ফলে কবি মন ভিন্নতার দাবী করতেই পারে। একজন কবির ধ্যান জ্ঞান, তার চেতনা, তার ভাবনার জগত একেবারেই ভিন্ন হতে পারে। সে অর্থে “কবি মন” স্বতন্ত্র এক বৈশিষ্ট্য।
• কবি মন একলা হতে জানে না
• তাদের মনের ভেতরে অন্য একটি মন থাকে
• কবি কখনো বন্ধুহীন হয় না
• কবি নিজের সাথে নিজেই কথা বলতে পারেন নির্ভাবনায়
• কবি কখনো নিশ্চুপ থাকতে পারেন না, অনর্গল কথা বলাই কবি’র বৈশিষ্ট্য
• কবি একাকীত্বে থেকেও একা থাকেন না
• কবি থাকেন ভীষন রকম সংবেদনশীল
পুরো কাব্য জুড়েই কবি মনের বৈশিষ্ট্য কেমন হয় বা হতে পারে, তারই বর্ননা দেয়া হয়েছে যা দ্বারা “কবি মন”কে আমরা সনাক্ত করতে পারি। কিন্তু উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর কোন আক্ষরিক মিনিং নেই, লাইনের প্রতিটি শব্দের শব্দার্থ খুঁজে খুঁজে পুরো লাইনের কোন অর্থ বের করা যাবে না। এখানেই একজন কবি’র অনন্যতা। একজন কবি, শব্দের মাধ্যমে অর্থের ইনার (লুকানো/গুপ্ত) মিনিং তৈরি করেন যা অন্য কেউ পারে না সচরাচর। যেমন-একটি উদাহরন দেয়া যাক-
কবি মন একলা হতে জানে না, কবি একাকীত্বে থেকেও একা থাকেন না কিংবা কবি কখনো বন্ধুহীন হয় না, অর্থাৎ একজন কবি’র সাথে বন্ধুত্ব হয় শব্দের, ভাবনার, চেতনার। কবি শব্দকে পিটিয়ে শব্দের ভেতরের কথা উন্মোচন করেন, যে কারনে কেউ কেউ কবি’কে “শব্দ কামার” বলে থাকেন। ফলে, কবি কখনো একা হতে পারে না, শব্দেরা তার সাথে কথা বলে, শব্দেরা তাকে ভাবায়, শব্দেরা নুতন ভাবনা তৈরী করে দেয়। কবি নিরন্তর নিজেকে আবিস্কার করেন নুতন ভাবনা দ্বারা।
একই ভাবে, কবি মনের উপরোল্লিখিত সবগুলো বৈশিষ্ট্যকে বিশ্লেষন করলে, আলাদা একটা সত্ত্বা দেখতে পাওয়া যাবে নিঃসন্দেহে, যাকে সংহীতা গাঙ্গুলী বলেছেন “কবি মন”
কবি’র জন্য রইলো অফুরন্ত শুভেচ্ছা।