আলোচনা ৯৫
কবি এইচ আই হামজা এর কাব্য “কিছু লোকের স্বভাব” পড়তে গিয়ে প্রথমে একটু খটকা লাগলো, শিরোনাম এবং কবিতার মূল বক্তব্যের সাথে। একেবারেই অমিল তা ঠিক না তবে মুল বক্তব্য যতটা গভীর এবং বৃহৎ পরিসরে ভাবা হয়েছে সে তুলনায় শিরোনাম অনেকটাই হালকা মনে হয়েছে, অন্তত আমার কাছে, আমার ভুলও হতে পারে। কবিতার শিরোনাম দেখে, খুব হালকা গোছের কবিতা বলে পাঠক এড়িয়ে যেতে পারে, কিছু লোকের স্বভাব ভিন্ন হতেই পারে, এর আর এমন কি!!
কিন্তু কবিতায় সামগ্রিক সমাজ ব্যবস্থার এক অবক্ষয়ের চিত্র একেছেন সুনিপুন ভাবে। আজকাল বাজারে গেলে দেখা যায় কে কার আগে কিনবে, দাম যাই হউক সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারো কারো কাছে এত বেশী পরিমাণ টাকা আছে, অন্যায়ভাবে উপার্জিত টাকার ঝনঝনানি এত বেশী যে, অন্যদের প্রয়োজন, অন্যদের চাহিদা, বাজার মুল্য ইত্যাদি কোন কিছুরই তোয়াক্কা করে না। এমন কি, খুব কম দামি জিনিস কিংবা দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়াও বিলাসী দ্রব্যের (স্বর্ণালঙ্কার, ফ্লাট, গাড়ি) ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। সামগ্রিকভাবে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতামূলক সমাজ ব্যবস্থার চিত্র দেখা যায়। মানবতাবোধের, সুশাসনের, নৈতিকতার… কোন প্রশ্নই যেন নেই, এসব যেন কোন কালেই ছিল না।
ক্ষমতাবান মানুষগুলো (নীতি নির্ধারকগণ, রাজা) হাসছে, খেলছে, সুখের সাগরে ভাসছে, অন্যদিকে প্রজারা (জনসাধারণ) সব দুঃখে মরছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হোল, এসব নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই, কারো যেন কিছু করার নেই, বলার নেই, এটাই যেন নিয়ম, অনিয়মগুলোই নিয়মে পরিনত হয়েছে। পুরো সমাজ যেন এক “তোয়াজি” সমাজে পরিণত হয়েছে, সবাই সবাইকে তোয়াজ করছে, অন্যায় করা ব্যক্তিকেও সবাই জনসমক্ষে তোয়াজ করছে। কি অদ্ভুত এক সমাজে আমরা বসবাস করছি!! সত্যিই সেলুকাস !!!
কবির প্রতি অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা, দারুণ এক সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কবিতা উপহার দেয়ার জন্য।