আলোচনা ৭০
বিশ্বব্যাপি এক চরম বাস্তবতার প্রেক্ষিতে কবি শেলি তার কাব্য ‘কেউ আজ প্রতিবাদ করে না’ রচনা করেছেন। নির্দিষ্ট কোন সময়ের বিবেচনায় কিংবা কোন দেশ কাল ভেদে কবি এ সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন কিনা তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। কেননা হাজার বছরের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে, প্রতিবাদ করেই বেঁচে থাকে এবং প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে পরিবর্তনের সূচনা করে। কিন্তু প্রত্যাশিত প্রতিবাদ হয় কিনা কিংবা স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে মানুষ ঝাপিয়ে পরে কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যায় ।
সাম্প্রতিক কালে বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে ‘আরব বসন্ত’ মানুষের প্রতিবাদের ফসল কিন্তু অন্য বিবেচনায় আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া যুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ কোথায় ? আবার পাক-ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস প্রতিবাদের ইতিহাস, আরও ছোট করে বললে, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল প্রতিবাদ মুখর সংগ্রাম এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে, ভাষার স্বাধীনতার ইতিহাসও রচনা করেছিল বাংলাদেশ।
অতি সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে ছোট বড় কিছু সামাজিক আন্দোলনের, সামাজিক প্রতিবাদের ঝিলিকও দেখা দিয়েছে, তারপরও কবি কেন বলতে চেয়েছেন, কেউ আজ প্রতিবাদ করে না? পাঠকের মনে এ প্রশ্ন বারবারই আসে কিন্তু আমি মনে করি, কবি পরিবর্তন মুখী মানব চরিত্র পর্যবেক্ষণ করেই হয়তো এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন ।
চারদিকে যে পরিমান অন্যায়, অত্যাচার অনাচার চলছে, যেভাবে মানবিকতার বিপর্যয় ঘটছে, যেভাবে শাসক গোষ্ঠী মানুষের রক্ত চুষে মসনদের গদিতে আসন পেতেছে তাতে করে আরও বেশী প্রতিবাদী মানুষের দেখা পাওয়ার কথা, আরও বেশী সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ হওয়া উচিত অথচ মানুষ কেমন গাঁ-সওয়া হয়ে গেছে, খাচ্ছে, ঘুরছে, আরামসে ঘুমোচ্ছে। খুব বেশী স্বার্থপর হয়ে গেছে মানুষ, কেবল নিজের উপর ঢিল পরলে একটু সরব হচ্ছে অন্যথায় ফেবুতে স্ট্যাটাস দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে। মানুষ এখন আর প্রতিবাদী চরিত্র ধারণ করে না, খুব বেশী হলে একটু সরব হয় মাঝে মাঝে।
সবশেষে কবি স্পষ্ট ভবিষ্যৎ উচ্চারন করেছেন, সমাজ থেকে প্রতিবাদী চরিত্র বিলুপ্ত হলে- “একদিন সব দেনা দিতে হবে, পালাবে কোথায় তুমি ভাই, তখন দেখবে তুমি হতাশ হয়ে, কোথাও যেন আর নেই ঠাই” ।
সমসাময়িক প্রেক্ষিতে চমৎকার এক কাব্য উপহার দিয়েছেন, কবির জন্য রইলো সংগ্রামী শুভেচ্ছা ।