বিশ্লেষণ -৪১
কিছুদিন আগে আমার একটি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল টাইটেল “স্বচ্ছ কাঁচের দেয়াল”, কাজ আবার আরেকটি কবিতা আলোচনা করছি কবি পারমিতা ৫৮(অনুরাধা) এর ‘কাঁচের দেওয়াল’। দুটো টাইটেল প্রায় এক হলেও দুটো ভিন্ন ভাবধারায় লেখায় কবিতা দুটো । কি অদ্ভুত, একই টাইটেল রেখে দুটো ভিন্ন ধারায়, ভিন্ন ভাবনায় কবিতা লেখা যায়। একেক জনের ভাবনার জগত একেকরকম , একই শব্দ দ্বারা কিভাবে ভিন্ন ভাবনাগুলোকে গাথা যায় তারই প্রমাণ কবিতা দুটো।
কবি পারমিতা তার কবিতায় এক বিষণ্ণ মনোভাবের, এক পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে জীবনের রঙ কেমন পাল্টে যায় তারই এক ছবি একেছেন। খুবই বাস্তবতার ভিত্তিমূলকে কবিতার লাইনে উঠিয়ে এনেছেন কবি। চেনা মানুষ কেমন বদলে যায়, কাছে থেকে দূরে সরে যায়, তৈরি হয় এক অদৃশ্য দেয়াল। মানুষটি ছিল খুব কাছের, খুব চেনা, অথচ আজ তাকে খুব কাছাকাছি থাকে চেনা যায় না । এক সময় তার অমলিন হাসি খুব চেনা ছিল, তার কথা বলার শব্দগুলো রক্তের শিরা উপশিরায় উত্তাল ঢেউ তুলত। কিন্তু আজ ভিন্ন চিত্র।
এক কাছে থেকেও, নিজেকে মনে হয় অন্য দ্বিপের বাসিন্দা, চেনা মানুষটিকে অচেনা মনে হয়। খুব কাছে থেকেও মনে হয় আমাদের মাঝে দুরত্তের মহাসমুদ্র, কেমন অস্পষ্ট সব কিছু। তার গলার সুমিষ্ট স্বর আজও শুনি কিন্তু আগের মত আর সুমিষ্ট মনে হয় না। আমার প্রতি তার যত্ন, তার খেয়াল আগের চেয়েও অনেক বেশী, বস্তুগত ভাবে আমি আগের চেয়েও অনেক বেশী সুখী কিন্তু কোথায় যেন একটি শুন্যতা অনুভব করি, কোথায় যেন একটি ফাঁক থেকে গেছে, হিসেব মেলাতে পারি নয়া ।
মনের মধ্যে উত্তাল এক ঢেউকে কেন্দ্র করেই কবিতার মূল যাত্রা। আর তার কারন খুঁজতে খুঁজতেই বেরিয়ে আসে এক যুগলে মধ্যকার অদৃশ্য দেয়াল, বাইরে থেকে কিছুই বোঝা না, সব কিছু আগের মতই আছে, কোন কোন ক্ষেত্রে, কোন কোন বিষয়ে আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে কিন্তু আদতে ভাল হয়নি। অদৃশ্য এক দেয়াল সব পাওয়াকে ‘না পাওয়াতে’ পরিণত করেছে। কেন এই দেয়াল, কি কারণে দেয়াল তৈরি ইয়ে, তার কারন, তার রহস্য কবি উন্মোচন করেননি। হয়তোবা আসল কারণ জানাটা সুখকর হত না, তাই কবি ইচ্ছে করেই তা উন্মোচন করতে চাননি। বরং কাচের দেয়াল এর পরিণতি কি, তাই দেখাতে চেয়েছেন। অদৃশ্য দেয়াল মনের মধ্যের কতটা ঝর বয়ে দিতে পারে কবি শুধু সেটুকু বলেই শেষ করেছেন। কবির জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইলো ।