আলোচনা ৯৬
বর্তমান যুগে ‘বিশ্বাস’ বলে আর কিছু নেই, কাউকেই আর বিশ্বাস করা যায় না, কারো উপরই আস্থা রাখা যায় না। যুগের নষ্ট চাহিদায় এখন যে যেভাবে পারে অন্যকে ঠকিয়ে নিজের ফায়দা লুটে নিতে চায়। অন্যকে ঠকানোর নুতন নুতন কৌশল তৈরি হয়েছে, অন্যকে প্রভাবিত করে নিজের আঁখের গোছানোর অনেক দক্ষতাও এক পক্ষ অর্জন করেছেন। কবি সৈকত পাল (নীরব দুপুর) তার ‘কাকাবাবুর স্ট্যাটাস-৯’তে সে কথাই বলার চেষ্টা করেছেন। কবি কাকাবাবুর স্ট্যাটাস নামকরনে সিরিজ আকারে লিখছেন সমাজের নানা অসঙ্গতি, অনিয়ম আর অত্যাচারের কাহিনী। কোনকিছুই তিনি কাল্পনিকভাবে লিখছেন না, চারপাশের ঘটনা বহুল মানুষের জীবন যন্ত্রণা পর্যবেক্ষণ করেই লিখছেন। এই সিরিজের কবিতা নিয়ে আলোচনার পাতায় আসার ইচ্ছে অনেকদিন থেকেই মনে কাজ করছিল। অবশেষে সিরিজের নবম কবিতা নিয়েই লেখার সুযোগ হল।
আসলে ‘কাকাবাবু’ একটি কাল্পনিক চরিত্র, মুলত সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক কাকাবাবু, যারা প্রতিনিয়তই মানুষকে ঠকাচ্ছে, ধোঁকা দিচ্ছে, অত্যন্ত সুকৌশলে মানুষকে মোটিভেশন দিয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে, একপক্ষ ঠকছে অন্যপক্ষ ঠকাচ্ছে- এভাবেই সমাজ চলছে আর আমরা গর্বে বুক ফুলিয়ে বলছি, সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে, প্রগতির পথে আমরা, সভ্যতার হাইওয়েতে আমরা, মানবতার পতাকা উড়িয়ে চলছি আমরা। এখানে কবি, উদাহরন হিসেবে একটি মাত্র গল্প কাকাবাবুর মাধ্যমে প্রকাশ করেছে কিন্তু হাজারো গল্প, হাজারো কাকাবাবু আছে আমাদেরই চারপাশে।
কাকাবাবু, নিম্নআয়ের মানুষের অর্থনৈতিক দুরাবস্থাকে পুজি করে, একটু বাড়তি আয়ের আকাঙ্খাকে পুঁজি করে ফেদে বসেন তার কৌশলী ব্যবসা। মানুষকে বোঝাতে থাকেন, ‘এটা খুবই ভালো পলিসি, পাঁচ বছরে ডবল”, ধারনা করছি ‘ক্ষুদ্র সঞ্চয়’ প্রকল্পের কথাই বলছেন। মানুষ সরল বিশ্বাসে অর্থনৈতিকভাবে একটু ভাল থাকার প্রত্যাশায় হুমড়ি খেয়ে পরেন ‘নুতন পলিসিতে’, নিজের রক্ত আর ঘামের বিনিময়ে অর্জিত অর্থ তুলে দেন কাকাবাবুর কাছে। আশায় দিন গুনতে থাকেন, পাঁচ বছর পর তা ডাবল হবে, আরও একটু ভাল থাকতে পারবে, কাকাবাবু তাইতো বলেছে।
কিন্তু আশার গুড়ে বালি, কাকাবাবুর বাকচাতুর্য বুঝতে পারেনি, ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি কত বড় প্রবন্ধনার সম্মুখিন হতে যাচ্ছে তারা, বুঝতে পারেনি কতটা প্রতারনার স্বীকার হতে যাচ্ছে তারা। কাকাবাবু, অন্যের টাকায় গাড়ি চরে বেড়ায়, তার টিকিটিও কেউ ছুঁতে পারে না, যারা পারেন কাকাবাবু তাদের মুখ বন্ধ রাখেন, তাদের পকেট ভারী করে দেন। ফলে আশায় দিন গুণে মানুষ কিন্তু সেদিন আর আসে না। যখন বুঝতে পারে প্রতারণার কথা তখন আর কিছুই করার থাকে না। একটি সমাজ অবক্ষয়ের চিত্র কবি এভাবেই অঙ্কন করেছেন।
তবে কবি শেষ লাইনে এক কঠিন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, পরাজিত হতে হতে মানুষগুলো একদিন একত্রিত হবে, রুখে দাঁড়াবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, মানুষের সম্মিলিত শক্তি তখন কালবৈশাখীর রূপ নেবে, কবির ভাষায় “এ স্থিরতা কোন পরাজয় নয় কাকাবাবু !কালবৈশাখীর পূর্বাভাস”। কবির প্রতি অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা, দারুণ এক বিষয় নিয়ে কবিতা উপহার দেয়ার জন্য যা পাঠককে ক্রমাগতই ভাবতে সহায়তা করবে।