আলোচনা ১২৩
কবিতাটি পড়ার পর বেশ কিছুক্ষন ভাবছিলাম, মানুষ এবং তার জীবনচক্র কিংবা মানুষের কর্মকান্ডকে “কাগজ ও সুতোর” গল্পের মাধ্যমে কি চমৎকার বিন্যাস করেছেন কবি। কিছু কবিতা পাই, বেশ রূপকতায় ভরপুর, কিছু কবিতা পাই কাব্যরূপ না থাকলেও, কবিতার থীম এর কারনে পড়তে বেশ ভালো লাগে, আবার কিছু কবিতায় হয়তো জোড়ালো কোন থীম থাকে না কিন্তু কাব্যগুনে তা পড়তে বেশ লাগে। আমার বরবরই কাব্যগুন অপেক্ষা থীম বেজড এবং ছোট কবিতা ভালো লাগে।
“ঘুড়িটির নাটাইয়ে অদৃশ্য ঈশ্বরের কালোহাত”, মানুষ তার আকাঙ্ক্ষা থেকে ঘুড়ির মতোই ইচ্ছেমতো উড়তে চায়, যা ইচ্ছে করে তাই করতে চায়, প্রতিদিন নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চায় কিন্তু মানুষ নিয়ন্ত্রনহীন নয়, তাকে কেউ না কেউ নিয়ন্ত্রন করে, ঈশ্বর, আল্লাহ, খোদা, গড যে নামেই ডাকি না কেন। এখানে ‘কালোহাত” বলতে আমার ধারনা রূপক হিসেবেই ব্যবহার করা হয়েছে, আক্ষরিক অর্থেই ‘কালোহাত” নয়। ঈশ্বরের হাত কালো কেন হবে? নিয়ন্ত্রনহীন যাত্রাকে নিয়ন্ত্রনে রাখাকেই “কালোহাত” বলা হয়েছে।
মানুষ সসীম থেকে অসীমের পানে ছুটতে চায়, সুতোর বন্ধনকে ভুলে গিয়ে অসীমতার সাথা পাল্লা দিতে চায়। ফলে আবারো রূপক অর্থেই “পাখির সাথে পাল্লা দিয়ে ডানা মেলে অচেনা অসীমে”, বলা হয়েছে, কেনন আমরা জানি পাখি’র ও সীমাবদ্ধতা আছে। একটি সীমাবদ্ধতাকে অন্য একটি সীমাবদ্ধতার সাথে তুলনা করলে তার সঠিক তুলনা হয় না কিন্তু এখানে “পাখির” প্রকৃতি প্রদত্ত পাখাকে তুলনায় রাখা হয়েছে বেশ চমকপ্রদভাবে।
মানুষের এই যে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে চলা, বিবেকহীনভাবে ছুটে চলা, কোন কিছু বিবেচনা না করেই, দুমড়ে মুচড়ে সব জয় করার বাসনা, ফলে নিজের ফাঁদে নিজেই পড়ে। যে কারনে আজ পরিবেশের ভারসাম্য নিয়ে সমগ্র মানবজাতি এতো উদ্বিগ্ন, নির্বিচারে গাছ কাটা এবং পরিবেশ দূষন করা, পানি দূষন, শব্দ দূষন... সবই মানুষের বিবেচনাহীন ছুটে চলার উচ্চাক্ষার ফল। কবি শেষে এসে বলেন, মানুষের বিবেচনাহীন ছুটে চলার প্রভাব, তার নিজের কর্মকান্ডের জন্য তার নিজের উপরই পড়ে শেষ পর্যন্ত। এই যে আমরা সারা বিশ্বের মানুষ, বিশ্ব নেতারা পরিবেশ দূষন নিয়ে ভাবছি, যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে ভাবছি, ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে ভাবছি, এখানে সেখানে আন্তর্জাতিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম হচ্ছে কিভাবে পরিবেশ দূশন রোধ করা যায় ইত্যাদি,কিন্তু মানুষের নির্বোধ আচরণ, বিবেচনাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা কিভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়, সেদিকে খেয়াল নেই কারোরই ।
কবি খুব অল্প কথায়, দারুনভাবে বিশ্ব বিপর্যয়ের দিকে ইশারা করেছেন। কবিতাটি আমার দারুন লেগেছে। কবি’র জন্য শুভেচ্ছা রইলো।