আলোচনা ১৯২
আমরা সব সময় “মানবিকতা” ইস্যু নিয়ে কথা বলি, সারা বিশ্বে মানবাধিকার সংরক্ষনের জন্য “জাতিসংঘ” নামক আন্তর্জাতিক সংস্থা তৈরী হয়েছে, রচিত হয়েছে, “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ”, যেখানে ১৪৩ দেশের রাষ্ট্র প্রধানগন মানবাধিকার সংরক্ষনে নিজ নিজ দেশে এবং সারা বিশ্বে কাজ করার জন্য অঙ্গিকার করেছেন। এতো যে আয়োজন, এতো যে ঢাকঢোল পেটানো, আমরা কি বলতে পারি, মানবাধিকার সংরক্ষনের নামে উল্টো মানবাধিকার হরন হচ্ছে না প্রতিনিয়ত? বলতে কি পারি, মানুষের প্রধান পরিচয় প্রথমে “মানুষ”, সে কারন তার মানব অধিকার মানে মানবাধিকার সংরক্ষন করা প্রতিটি রাষ্ট্রের নৈতিক এবং প্রধান দায়িত্ব।
এই প্রক্ষাপটে, কবি প্রনব মজুমদার তার কাব্য “জার্নি টু ৩০২২” রচনা করেছেন। কল্পনা করছেন এখন থেকে আরো ১০০০ হাজার বছর পর মানুষের আচরন, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কি বদলাবে, মানুষ কি আসলেই “মানুষ” হতে পারবে নাকি এখনকার মতো “মুখোশ ধারী” মানুষ থাকবে? মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে ঈর্ষা করার মতো উন্নতি করছে, চিকিৎসা বিজ্ঞান মানুষের আয়ু বাড়িয়ে দিচ্ছে, কৃষিবিজ্ঞান প্রতিনিয়ত জনসংখ্যার চাপ এবং খাদ্য চাহিদা সামাল দিতে নুতন নুতন কৃষি আবিস্কার করছে। কিন্তু তারপরও কি সব মানুষের খাদ্য, চিকিৎসা, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষার নিশ্চয়তা আছে, আছে কি জীবনের নিরাপত্তা কিংবা স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি?
কবি কল্পনায় দেখেছেন, হাজার বছর পরে অর্থাৎ ৩০২২ সালে, মানুষের উত্তরোত্তর উন্নতির কারনে মানুষ একদিন মঙ্গল গ্রহেও পৌঁছে গেছে। সেখানে গ্রহের প্রহরী কাকে প্রবেশাধিকার দেবে? কি পরিচয় থাকলে কিংবা কোন পরিচয় থাকলে মানুষ সেখানে প্রবেশাধিকার পাবে?? মূলত এ প্রশ্নটা সামনে রেখেই কবি’র ভাবনা আবর্তিত হয়েছে। প্রশ্নটা যেমন এখনকার সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য, আগামী এক হাজার বছর পরও একইভাবে প্রযোজ্য এমনকি মানুষ যখন আরো উন্নত হয়ে মঙ্গলগ্রহেও বসবাস শুরু করবে তখনো।
মঙ্গল গ্রহে প্রবেশের সময় কেউ নিজেকে পরিচয় দেবে হিন্দু ধর্মের উঁচু কাষ্টের মানুষ, ধর্মপ্রান মানুষ, পূজোপাঠ সহ নানামুখী ধর্মীয় অনুশীলনে দক্ষ একজন, সমাজে তার সুনাম আছে বেশ। পরের জন পরিচয় দেবেন, মুসলমান হিসেবে, নিয়মিত সালাত আদায় করে থাকেন, ধর্মীয় অন্যান্য আচার অনুষ্ঠান পালনে কোন ঘাটতি নেই, সততার সাথে নিজের জীবন পরিচালিত করে থাকেন। অন্যজন পরিচয় দেবেন, একজন খাটি খৃষ্ট ধর্মের মানুষ হিসেব, নিয়মিত চার্চে যেতে আলসেমী করেন না, খৃস্ট ধর্মের সকল নিয়ম কানুন যথাযথভাবেই পালন করে থাকেন। শেষে একজন আসলেন, তিনি নিজেকে কোন ধর্মীয় পরিচয়ে পরিচয় দিতে পারলেন না, নিজেকে খুব ছোট মনে করছিলেন। কাচুমাচু করে অবশেষে একটা পরিচয় দিলেন বটে কিন্তু সেটাতে তিনি নিজেও খুব তৃপ্ত ছিলেন না। বললেন, আমি একজন “মানুষ”।
গ্রহের প্রহরী এতে মহা খুশী, তাকে সহজেই মঙ্গল গ্রহে প্রবেশাধিকার দিলেন এবং উষ্ণ অভিবাদন জানালেন। কবি ফিরে এলেন কল্পনার জগত থেকে ইহজগতে, আবার সেই পৃথিবী নামক গ্রহে যেখেনে “মানুষ” পরিচয়ে কেউ পরিচিত হয় না, এই পরিচয়ের কোন মূল্যও নেই। এখানে, ধর্ম, জাত, শ্রেনী অবস্থান, বংশ পরিচয়, অর্থের মজবুত ভীত... ইত্যাদিই মূল পরিচয়। এখানে “মানুষ’ বলে কিছু নেই।
আরো এক হাজার বছর পর, কবি কল্পনা করেছেন মানুষ আরো উন্নত হবে, এখনকার মতো হীনমন্যতাগুলো ছাড়িয়ে মানুষ আরো উন্নত প্রানী হিসেবে নিজেকে আবিস্কার করতে পারবে, মানুষ সত্যিকার অর্থেই “মানুষ” হতে পারবে। সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।
কবি’র জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা।