আলোচনা ২৭
চমৎকার একটি মটিভেশনাল ইস্যু নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন কবি জসিম উদ্দিন তার ‘জীবন কোন প্রাচীর নয়’ কাব্যে। জীবন কি? জীবনের মানে কি? কেন এই যাপিত জীবন ইত্যাদি প্রশ্নগুলো চিরন্তন, মানব প্রজন্মের শুরু থেকে আজ অবধি বহমান কিন্তু তার কোন সার্বজনীন উত্তর কারো কাছেই নেই। মুলত কোন না কোন ব্যর্থতা কিংবা অসফলতা যখন কাউকে গ্রাস করে তখনই জীবন সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয় এবং এ জাতীয় প্রশ্নগুলো মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। কেউ সময়ের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে পারে আবার কেউ অতল গহ্বরে হারিয় যায়। আবার খুব প্রিয়জনকে হারানোর ব্যাথা সামলে উঠতে না পেরে অনেকেই জীবনকে শেষ করে দিতে উদ্যোগী হয়ে উঠে। কিন্তু মজার বিষয় হল, জীবনের ভাল সময়গুলোতে কারো মনেই এ জাতীয় নেতিবাচক চিন্তার জন্ম হয় না ।
জীবনের একটা নিজস্ব ছন্দ আছে, বৈচিত্র্য আছে, আছে ঘাত প্রতিঘাত, আছে উথান পতন, এসব নিয়েই জীবন। জীবনকে জীবনের মত করেই ভাবতে হবে। জীবনকে যান্ত্রিক ভাবে ভাবলে, জীবনকে বস্তুগত ভাবে ভাবলে, কারখানার উৎপাদিত পন্যের মত কেবল ভাল ভাল পণ্য উৎপাদনের প্রত্যাশা থাকবে, ভাল কিছু উৎপাদিত না হলে যন্ত্রের রিপ্লেসমেন্ত করি এবং নুতন করে উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠি। কিন্তু জীবনকে যন্ত্রের মত তুলনা করে অসময়ে শেষ করে দেয়াটা বোকামি, সে কথাই কবি বলতে চেয়েছেন তার কাব্যে “জীবন কোন বস্তু নয় যে কারো কথায়, কষ্ট পেলে শেষ করে দিতে হবে । জীবনটা কোনো নিকোটনের ধোয়া নয়, শেষ টান দিয়ে ফেলে দিবে”
আবার জীবন কোন প্রাচীরের মত স্থির বিষয়ও নয় যে এক জায়গায় আটকে থাকবে। জীবন একটি বহমান নদীর মত কেবল এগিয়ে চলে, জীবন পেছনে যেতে পারে না, সামনে এগিয়ে যাওয়াই জীবনের ধর্ম। আবার প্রত্যেকেরই জীবনের প্রতি একটি দায়িত্ব বোধ আছে, ইচ্ছে হলে যেমন তেমন করে জীবনকে অতিক্রম করা যাবে না। প্রকৃতি প্রদত্ত দায়িত্ববোধ নিয়েই জীবনকে পরিচালিত করতে হবে। কেবল যথেচ্ছ ভাবে ইচ্ছে হলেই ঘুড়ির সুতোর মত ছেড়ে দিলাম, সেটা কোন দায়িত্বশীল আচরন নয়। সে কথাই কবি নানাভাবে বলতে চেয়েছেন “জীবন কোন প্রচীর নয় যে, সেখানেই থেমে যাবে। জীবন কোন ঘুড়ি নয় ইচ্ছে,হলেই সুতো ছিড়ে দিবে”।
জীবনের একটি আপাত গ্রহণযোগ্য ব্যাখা দিয়ে, জীবনকে ভাগ্যের উপর সপে না দিয়ে, নিজের ইচ্ছে শক্তির উপর ভর কেমন করে জীবনের ছন্দে ফেরা যায়, কেমন করে নিজের আত্মপ্রত্যয়ে নিজের ভাগ্য নিজে গড়া যায় তারই মোটিভেশন দিয়েছেন- “তুমি যেমন টা চাইবে ঠিক তেমন জীবনই, পাবে তোমার ভাগ্য যদি কেউ গড়ে দিতে পারে আর সেইটা হলো একমাত্র তুমি নিজে”। সবশেষে একটি চরম সত্যকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাবার তাগিদ চিয়েছেন খুব জোর দিয়ে “ব্যর্থতা কে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার নামই হল জীবন”।
খুবই সাধারন বক্তব্য নিয়ে কবিতাটি লেখা, আমরা হরহামেশাই এমন উপদেশ শুনে থাকি, এমন মোটিভেশন পেয়ে থাকি কিন্তু একটু মনোযোগ দিয়ে কবিতাটি পড়লে একটি গভীর সত্য লুকানো আছে এতে । কবির জন্য শুভেচ্ছা রইলো ।