আলোচনা ১৩১
মাত্র চার লাইনের কবিতাও যে ভালো লাগতে পারে, তা খুব সময়ই অনুভব করি। চিন্ময়ী মিত্রের কবিতা “জীবনের যন্ত্রনা”, কবিতার শিরোনাম হিসেবে নুতন কিছু নয় কিংবা বিষয় হিসেবেও খুব আকর্ষন করার মতো নয় হয়তো। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদন, দহন, বিষাদ কিংবা যন্ত্রনা জীবনের স্বাভাবিক অংশ, একেক জনের জীবনে এসবের মাত্রা ভিন্ন হতেই পারে কিংবা গভীরতারও ভিন্নতা থাকতে পারে। কবিতাটি আমার মন ছুঁয়ে যাবার কারন-মাত্র কয়েকটি শব্দ, সেটাই ব্যাখা করছি বা আলোচনা করছি।
কবিতার প্রথম লাইনটি “ জীবনের যন্ত্রণা ছুঁয়ে যায়......”, চারটি শব্দের পর অনেকগুলো ডট চিন্থ, চিন্তাকে বেশ কিছুক্ষন থমকে দিয়েছিল, জীবন যন্ত্রণা বোঝা গেল, ছুঁয়ে যায়, তাও বোঝা গেল কিন্তু কতদূর ছুঁয়ে যায় সেটাই ডট ডট, যন্ত্রণাগুলো অসীম পর্যন্ত ছুঁয়ে যায়, যার কোন সীমানা নেই, এটা কি হতে পারে? প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মানুসারে, সুখ-দুঃখ পাশাপাশি কিংবা একের পর এক অবস্থান করে। কিন্তু এখানে যন্তণার যেন শেষ নেই, যন্ত্রনার গভীরতা বোঝানার জন্য ডট ডট ব্যবহার হয়েছে, চলমান প্রক্রিয়া বোঝাতে ডট ব্যবহার হয়েছে।
আবার শেষ লাইন “ছুঁয়ে যায় এক আলোকবর্ষ ভালোবাসার আকীঞ্চন”, আলোকবর্ষ গণনার নিয়ম আমরা জানি, এক আলোক বর্ষ আমাদের জীবনের জন্য দিন, মাস, বছর হিসেবে বেশ অনেক দূর। এখানে যন্ত্রণা ছুঁয়ে যাবার বিষয়টি, সাধারন গণনাকে (মাস/বছর/যুগ) অতিক্রম করে “আলোকবর্ষ” গণনায় বলা হয়েছে।
শেষ দুটো শব্দ “ ভালোবাসার আকিঞ্চন”, আমার জানা মতে “আকিঞ্চন” মানে হলো, দীনতা, বিনীত বাসনা ইত্যাদি প্রকাশে ব্যবহার হয়। জীবনের যন্ত্রণাগুলো কতোটা বিনীত ভালোবাসাকেও ছুঁয়ে যায়, যন্ত্রণা কতটা দীন হলে তা ছাপিয়ে যায়, ভাবা যায়!!!
পুরো চার লাইন জুড়েই, জীবন যন্ত্রণার গভীরতাকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। জীবনের কোন সাধারন যন্ত্রণাকে বোঝানো হয়নি। যন্ত্রণা একটা শব্দ মাত্র, কিন্তু তা পরিমাপের জন্য যেহেতু কোন একক নেই (মিটার, কিলো এর মতো) তাই ভিন্ন ভিন্ন শব্দের আশ্রয় নিয়েই তা পরিয়াপ করা হয়। কবি চিন্ময়ী মিত্র এখানে সে চেষ্টাই করেছেন, সেজন্যই কবিতাটি মন ছুঁয়ে গেলো।
কবির জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা