আলোচনা ৬৫
অনেকগুলো খণ্ড খণ্ড জীবন চিত্রে ফুটে উঠেছে এক চরম বাস্তবতা, আশা- নিরাশার দোলায় জীবনের ভেলা। আমাদের প্রতিদিনের চেনা চিত্র কিন্তু কবি ফয়েজ উল্লাহ রবি (পারিজাত), তার ‘জীবনের গল্প’ কাব্যে এঁকেছেন ভিন্ন মাত্রায়, ভিন্ন এক অনুভূতি দিয়ে। আমাদের নিত্যদিনের চেনা গল্প, আশা হতাশা, বেঁচে থাকার নুতন প্রত্যাশা আবার পেয়েও পেছনে ফেলা আসা না পাওয়ার হতাশাগুলো এক ভিন্ন আবেদন নিয়ে উপস্থাপন করেছেন।
নিকিলেশ অনিকেত ‘আকাশ ছুঁতে’ চায়, রোজ অপেক্ষা করে, আকাশ ছোঁয়া হয় না । অনিকেত আশার বানী শোনায় নিকিলেশকে কিন্তু আশার বাস্তবতায় ভিন্নতা। কলিম তার নিজের শহরকে নিজের মত করে পেতে চায়, নুতন স্বপ্ন দেখে, জ্যাম মুক্ত ফুটপাত দিয়ে হেটে হেটে অফিসে যাবে। খুব সাধারণ চাওয়া কিন্তু বাস্তবতায় সাধারণ চাওয়াগুলো নাগালের বাইরে চলে যায়, হতাশার জন্ম দেয়।
লাবন্য বেশ কিছু বছর ধরে লাভনিকে আশায় আশায় দুলিয়ে রাখে, লেখাপড়া শেষ করে বাড়ি ফিরবে, কিছু একটা করবে তারপর তাদের স্বপ্নের ঘর নির্মাণ হবে... এইসব কিন্তু লাবণ্য আরও বড় স্বপ্নের পেছনে ছোটে, স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে চলে যায়, লাভনি তার স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় নীল হয়। ব্যস্ত জীবনে মরশেদ বার বারই সান্ত্বনা দেয় তার প্রিয়তমাকে, এইতো আর কটা দিন, তারপর অখণ্ড অবসর, তোমাকে নিয়ে আমার স্বপ্নের বাসর, এভাবে চলতে চলতে প্রত্যাশিত অবসর আর আসে না, চিরকালের জন্যই অবসর আসে, মরশেদের পরকালের যাত্রায় তার প্রিয়তমা দহনে কাঁদে। আরিফ সাহেবের সান্ত্বনায় নাফিজ, স্বপ্নে বিভোর থাকে তাদের একদিন ‘লাল গাড়ি’ হবে, লাল গাড়ি হয় ঠিকই কিন্তু আরিফ সাহেবের জীবদ্দশায় হয় না। নাফিজ, লাল গাড়িতে চড়ে আর বার বার পেছনে ফেরে, বাবা আরিফ সাহেবের কথা মনে করে গুমরে কাঁদে।
জীবনের গল্পগুলো আসলে এমনই, পূর্ণতার কাছে গিয়েও অনেক সময় অপূর্ণতা আঁকড়ে ধরে আবার কখনো বা অপূর্ণতা নিয়েই জীবনের অবসান হয়। জীবনের সব চাওয়া বোধহয় প্রকৃতি মেনে নেয় না তাই কিছু চাওয়া পূরণের মাধ্যমে অপূর্ণতাকে জিইয়ে রাখে। কবি শেষ করেছেন দারুণ এক আবেগময় বার্তা দিয়ে-
“এই ভাবেই নিকিলেশ, অনিকেত, লাবণ্য-লাভনী
সময়ের নিয়মে মোরশেদ-মোরশেদা, কলি–কলিম
অথবা আরিফ-নাফিজ আমাদের এই সমাজেই বেঁচে থাকে’
আমার বিবেচনায়, অসাধারণ এক কাব্য রচনা করেছেন কবি ফয়েজ উল্লাহ রবি (পারিজাত), অভিবাদন কবি।