আলোচনা  ২৩২

এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানের অগ্রগতি নিয়ে কারো মনেই কোন সন্দেহ নেই, প্রতিনিয়তই আমরা বিজ্ঞানের সুফল পাচ্ছি, বিজ্ঞানের কল্যানে, প্রযুক্তির সুবিধে ভোগ করছি, জীবনকে সহজ করে তুলছি, ভোগ করছি বিজ্ঞানের নানা কারিশমা। বিজ্ঞানকে আমরা জীবন থেকে বাদ দিতে পারি না, অস্বীকার করার প্রশ্নই আসে না। এককভাবে বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের আগ্রযাত্রাকে নিয়ে কেউই কোন প্রশ্ন তোলে না।

কিন্তু যখন, বিজ্ঞান এবং ধর্ম, পাশাপাশি রাখা হয়, তখনই আমরা বিভক্ত হয়ে যাই, কেউ বিজ্ঞানকে ধর্মের প্রতিপক্ষ মনে করে, কেউ ধর্মকে বিজ্ঞানের প্রতিবন্ধকতা মনে করে আবার কেউ বা দুটোকে পাশাপাশি রেখে আলোচনাই করতে আগ্রহী নয়। আমি যেমন সব সময় বলি-

বিজ্ঞান ধর্মের জন্য অপেক্ষা করে না
ধর্ম বিজ্ঞানকে তোয়াক্কা করে না

বিজ্ঞানকে যখন বস্তুগত ভাবনা থেকে দেখা হয়, তখন বিজ্ঞানের কোন সীমাবদ্ধতা চোখে পড়ে না খুব একটা কিন্তু বিজ্ঞান দিয়ে যখনই আমরা আধ্যত্মিকতা খুঁজতে চাই কিংবা বিজ্ঞান দিয়ে আত্মিক ভাবনাগুলোকে ব্যখা করতে চাই, তখন নানা রকম জটিলতা তৈরি হয়, হিসেব মেলাতে পারি না, বিজ্ঞানকে তখন চ্যালেঞ্জ করতে পারি।

আলোচ্য কবিতাতেও কবি, বিজ্ঞানকে ধর্মের সাথে তুলনামূলক জায়গায় না রেখেও, এক প্রকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানের প্রতি। বিজ্ঞান কি “মানব মনের” সীমানা খুঁজে পেয়েছে? বিজ্ঞানের বাহাদুরি তো অনেক দেখলাম কিন্তু মানব মনের কতটুকু অংশ বিজ্ঞান আবিস্কার করতে পেরেছে? কবি লিখেছেন-

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বহু জট খুলেছে বিজ্ঞান;
মানব মন নিয়ে এখনো সীমিত জ্ঞান।
জটিল মানব মন;
নিজেও জানেনা সে কী করবে কখন!

মানব মনের এই যে জটিল অবস্থা, বিজ্ঞান এখনো কোন সমীকরনে পৌছাতে পারেনি। কিন্তু বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত পারেনি, এটা যেমন সত্য, কোনদিন পারবে না, সেটাই বা বলি কি করে?? বিজ্ঞানের সীমানা আমরা এখনো জানি না, বিজ্ঞানকে “এখন পর্যন্ত”, হিসেবে আমরা মহিমান্বিত করি ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যত সীমানা এখনই কিভাবে নির্ধারন করি? ভবিষ্যৎকে প্রজেক্ট করে কিভাবে বিজ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ করি? বর্তমানে দাঁড়িয়ে অতীতকে মোকাবেলা করা যায় কিন্তু ভবিষ্যতকে চ্যালেঞ্জ করা যায় না?

পুরো কবিতাটিই কবি, বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং এখন পর্যন্ত সীমাবদ্ধতাকে তুলে ধরেছেন, কোন উপসংহার টানেননি। আক্ষরিক অর্থ সরাসরি বিজ্ঞানকে চ্যালেঞ্জও করেননি, তীর্যক কোন প্রশ্নও করেননি, শুধু নিজের পর্যবেক্ষন এবং অভিজ্ঞতার দৃষ্টিতে, একটি মাত্র উপাদান অর্থাৎ মানব মনের বিশলতা এবং গভীরতাকে সামনে রেখে বিজ্ঞানের কাছে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

বিষ্ময় দিয়ে, বিজ্ঞানকে আরো এগিয়ে যাবার তাড়নাও দিয়েছেন

কবি’র জন্য রইলো অফুরন্ত শুভেচ্ছা