আলোচনা ১৩৪
কিছুদিন আগে আরো একটি কবিতা “এগারো ও তুমি-সৌমেন”, নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজকের কবিতাটিও অনেকটা সেরকম। ভাবতে খুবই আশ্চর্য লাগে, মানুষ কতভাবেই না তার ভালোবাসাকে মনে রাখে। একজনের অন্যজনের প্রতি ভালোবাসা জন্মের গল্পও নানা ধরনের। কেউ বা শুধু হাসিতে মুগ্ধ হয়ে সারাজীবন সেই হাসিটাই মনে ধরে রাখে, কেউ বা কোন একটি ঘটনা মনে রাখে, কেউ বা কোন একটি আচরন কিংবা অন্য কিছু। ভালোবাসার উদ্ভব যেমন রহস্যঘেরা একই ভাবে উলটো চিত্র অর্থাৎ ভালোবাসা বিষাদে পরিনত হবার ব্যপারটাও বেশ রহস্যময়। প্রকৃতি মানুষের মনে নানা রকম অনুভূতি তৈরি করেছে, আর একটি মাত্র অনুভূতি “ভালোবাসা”, সেটাই কত রহস্যময়। পুরো মানবজীবনের রহস্য নিয়ে প্রকৃতির এই অসাধারন কীর্তি, ভাবাই যায় না।
আমার যেমন, কোন নারীর প্রতি প্রথম ভালো লাগা তৈরী হয়, যদি সে নান্দনিক ভাবে শাড়ি পরতে পারে (পুটলির মতো শাড়ি পরলে সেটা হয় না), বাংলাদেশে খুব কম নারীই পাই যাদের শাড়ী পরার দক্ষতা থাকে কিন্তু কোলকাতায় দেখেছি কি দারুন তাদের শাড়ী পরার দক্ষতা। আর সেই শাড়ীর রঙ যদি হয়, রক্ত লাল, তবে তো কথাই নাই। নিজের ভালো লাগাটুকু বর্ননা করলাম, যার সাথে মিল আছে এই কবিতার।
কবির প্রিয়, “হলুদ রঙের শাড়ী”, শুধু হলুদ রঙের শাড়ী পরা সেই মেয়েকে দেখার জন্য কত সময় ব্যয় করেছেন, দিনের পর দিন, হয়তো প্রতিবছর সরস্বতী পুজোর দিনে। সেই ভালোলাগা হয়তো ভালোবাসায় পরিনত হয়নি কিন্তু এতো বছর পরও সেই ভালোলাগাটুকু ফিরে পায় অন্যভাবে অন্যরূপে। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে অনেকটা বছর, তার নিজের বয়স বেড়েছে, বিয়ে করে সংসারী হয়েছে, নিজেদের মেয়ের জন্ম হয়েও অনেকটা বছর পেরিয়ে মেয়ে এখন শাড়ী পরতে শিখেছে। কিন্তু সেই যে হলুদ রঙের শাড়ি, সেই যে ভালোলাগা তা আজ আবার ফিরে পাচ্ছেন মেয়েকে হলুদ রঙের শাড়ীতে দেখে। এর বছর আগের সেই ভালোলাগার স্মৃতি এখন মনে পরছে আবার। কিছু কিছু ঘটনা মানুষের মনের গভীরে গেথে থাকে সারাজীবন, ভুলে যায় আবার হঠাৎ হঠাৎই মনে পরে কাছাকাছি অন্য কোন ঘটনার সাথে মিল রেখে। তখন মানুষ নষ্টালজিয়ায় ভোগে। এ ধরনের নষ্টালজিয়া একদিকে ভালো কেননা পুরনো সময়কে ফিরে পাবার এক অনাবিল আনন্দ মনে বিরাজ করে, যে সময়টা হারিয়ে গেছে তা আবার নুতন ভাবে উপভোগ করতে পারে কিন্তু কখনো কখনো আবার তা বিষাদেও পরিনত করতে পারে।
কবিতাটি একটি নষ্টালজিয়া থীম কেন্দ্রিক হওয়ায় আমার মনে ভীষন দাগ কেটেছে। আমি নিজেও খুব নষ্টালজিয়া কেন্দ্রিক মানুষ।
কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।