আলোচনা  ১৯৫

ঘুষ নিয়ে কথা বলার এখন আর তেমন কিছু নেই , ঘুষ সংস্কৃতি এখন এক বাস্তবতা। সারাবিশ্বেই ঘুষ সংস্কৃতি আছে, আমাদের দেশে বা আমাদের মতো দেশে হয়তো একটু বেশীই আছে। পার্থক্য হলো, উন্নত দেশগুলো ঘুষ চলে একটা লেভেল পর্যন্ত, জনসাধারন তাদের দৈনন্দিন জীবনে তার আঁচ খুব একটা টের পায় না। আমাদের এখানে এমন একটা দিন যাবে না যেদিন ঘুষ সংস্কৃতির সাথে নিজেকে তাল মেলাতে হবে না। এখনে একটা অল্প পার্সেন্টেজ হলেও মানুষ পাওয়া যাবে যারা ঘুষ খায় না কিন্তু কোন দিন ঘুষ দেয় না, সারাজীবনে কাউকে ঘুষ দেয়নি, এমন মনে হয় একজনও পাওয়া যাবে না। এখানে বাস ট্রেনের টিকিট কাটতেও ঘুষ দেয়া লাগে। রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হলেই ঘুষের টাকা পকেটে রাখতে হয়। তেলের টাকা না থাকলেও, গাড়ি ঠেলে বাসায় নিয়ে আসা যাবে কিন্তু ঘুষের টাকা না থাকলে, গাড়ি আর ফিরে পাওয়া যাবে না। এটাই বাস্তবতা, এটাই এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবন। এখন তো ঘুষের প্রতিশব্দও বের হয়েছে- স্পীড মানি, চা-পানি খাওয়া, মিষ্টি খাওয়া ইত্যাদি।

একবার আমার একটা কাজে, ইন্সপেক্টর বললেন, স্যার চা খাওয়ার টাকা দিবেন না? জিজ্ঞেস করলাম, চা কি স্ট্রিট টি স্টলে খাবেন? তাহলে ১০ টাকা, যদি সাধারন কোন হোটেলে খেতে চান তাহলে ২০ টাকা, এক্টূ উঁচু মানের দোকানে খেতে চাইলে ৫০ টাকা, যদি আরো এক্টূ দামী এসি হোটেলে খেতে চাইলে ২০০টাকা কিন্তু যদি হোটেল পুর্বানী বা ইন্টারকন্টিনেন্টালে খেতে চান তাহলে ৫০০ টাকা। কোথায় খাবেন, সেটা বললে আমার জন্য সুবিধে হয়।

ঘুষ যখন পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে গ্রহনযোগ্য পর্যায়ে চলে যায় এবং রাষ্ট্রিয় আয়োজনেই ঘুষ সংস্কৃতিকে প্রমোট করা হয় তখন ঘুষ নিয়ে আর কথা বলার কিছু থাকে না। বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ গবেষনা করে দেখিয়েছেন-

ঘুষ, যে কোন দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য খুব সহায়ক ভুমিকা পালন করে। ঘুষ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কথা বলা মানেই নিজেদের অর্থনীতিকে অচল করে দেয়া। ধরা যাক একজন অফিসার সারাদিন অফিসে ঘুষ নিয়ে বিকেলে বিরিয়ে এলেন এবং বাসায় ফেরার আগে বাজারে ঢু মারলেন। তিনি ৫০০ টাকার মাছ ৮০০ টাকা দিয়ে কিনতে একটু দ্বিধা করবেন না, দ্রুতই মাছ কিনে অটোরিক্স নিয়ে বাসার ফিরলেন, অটোরিক্সাকে ২০০ টাকা না দিয়ে ২৫০ টাকা দিলেন খুশী হয়ে। মাছ বিক্রেতা অতিরিক্ত লাভের কারনে বাসার ফেরার পথে ৫কেজি আম নিয়ে ফিরলেন, অন্যদিন হলে বড় জোড় ১কেজি আম কিনতেন। অটোরিক্সা ওয়ালা, হোটেলে বসে্ আনন্দে একটা মোগলাই পরোটা খেয়ে পরের ট্রিপের জন্য সিগারেট টানতে থাকলেন, অন্যদিন বাসার বাজারের খরচের চিন্তায় অস্থির থাকলেও আজ কোন অস্থিরতা নেই মনে। এভাবে ঘুষ সংস্কৃতি অর্থনীতির চাকা সচল রাখে।

তবে ঘুষ সংস্কৃতির একটা পিরামিড ব্যবস্থাপনা আছে, কবি দীপঙ্কর বেরা যেমনটা তার কাব্য “ঘুষের পিরামিড”এ বলেছেন। খুব নীচু লেভেলে ঘুষ অনেক সময় কেবল বেচে থাকার শেষ চেষ্টা হিসেবে দেখা যায়, মধ্যবিত্তের ঘুষ অনেকটা “সুখ বিলাস” আর উচ্চ বিত্তের ঘুষ “এক প্রকার নেশা, এক প্রকার আসক্তি”। ফলে ঘুষ সংস্কৃতির একটা পিরামিড কাঠামো থাকেই সমাজে।

কবি’র জন্য রইলো শুভেচ্ছা।