আলোচনা ৮৮
“যাও পাখি বল তারে, সে যেন ভুলে না মোরে”, ‘হৃদয়ের ছোঁয়া’, ‘মনের পাখি মনের ভিতর কিচিরমিচির করে, তোমায় না দেখলে মন আনচান করে”, এরকম হরেক রকম লেখা আমরাও ছোটবেলায় খালা কিংবা বড় বোনদের রুমালের মধ্যে লিখতে দেখেছি। গত শতাব্দীর ৭০-৮০ দশকের বাংলা সিনামায় নায়িকাদের লেখা এরকম রুমাল খুব দেখা যেত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং প্রযুক্তির কল্যাণে মধ্যবয়সী কিংবা প্রবীণদের কাছে আজ এসব কেবলই স্মৃতি আর টিন এজারদের কাছে ‘গেয়োপনা” কিংবা অনাধুনিকতা”।
পারমিতা৫৮ (অনুরাধা) তার কাব্য ‘ফুল তোলা রুমাল’তে আবেগ মিশ্রিত এক সময়ের উপাখ্যান রচনা করেছেন খুবই সযত্নে, তুলে ধরেছেন এক সময়ের আবেগ প্রকাশের চিরাচরিত মাধ্যম রুমালে লেখা দিয়ে। সেই সময়ে, রুমালে লেখা লিখে কিংবা ফুল একে মানুষ দৈনন্দিন জীবনের কোন বার্তা প্রেরণ অপেক্ষা আবেগ, বিরহ, প্রতীক্ষা কিংবা মনে তোলপাড় করা অনুভূতিগুলোকেই প্রকাশ করতো। রুমালে আঁকা ফুলের মধ্যে প্রিয়তমার হাতের স্পর্শে লেগে লাগতো, গায়ের সুগন্ধ অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তো, ভেতরের আবেগ স্পর্শ করে যেত দূরে থাকা প্রেমিকার মনকে।
পারমিতা৫৮ (অনুরাধা), নবিস হাতে প্রথম ত্যাড়াব্যাকা সবুজ পাতা দিয়ে লাল ফুল একেছিলেন রুমালে, দিদিমনি বলেছিল খুব সুন্দর হয়েছে। কোন এক শ্রাবন মাসে সেই রুমাল তুলে দিয়েছিল বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষমাণ একজনের হাতে। সেদিন শুধুই ফুল তোলা এক রুমাল তুলে দেয়নি পারমিতা ৫৮ (অনুরাধা), দিয়েছিল নিজের রক্তে মিশে থাকা আবেগ, অনুভূতি, ভাললাগাটুকু। মনে মনে অপেক্ষা ছিল, সেই রুমালের প্রতিউত্তর আসবে কোন এক আবেগি সময়ে কিন্তু আর আসেনি। রুমাল গ্রহন করা যুবক ক্ষনিকের ভাললাগায় উৎসাহিত হয়ে রুমাল নিয়েছিল হয়তো কিন্তু পারমিতার মত করে অনুভুতি দিয়ে নেয়নি। এত বছর কেটে গেছে,যুবক হয়ত ভুলেই গেছে সেই রুমালের কথা কিন্তু পারমিতা আজও ভোলেনি, তার খুব জানতে ইচ্ছে করে, তার সেই রুমাল কি সযত্নে রেখেছে? সেই রুমালের কোন মুল্য কি আছে সেই যুবকের কাছে??
ফুল তোলা এক রুমালের মধ্য দিয়ে কবি পারমিতা কি অসাধারণ আবেগময় সময়ের চিত্র তুলে ধরেছেন, আজও মানুষের মধ্যে আবেগ, ভালবাসা আছে কিন্তু তার ধরন পাল্টে গেছে, এখন আর আবেগ আগের মত ঝড়ে ঝড়ে পরে না, এখন আবেগ অনেকটা নিয়ন্ত্রিত, অনেকটাই গোছানো, অনেকটাই প্রফেশনাল কাঠামোতে বন্দী।
কবির প্রতি অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা রইলো ।